রামেকের করোনা ইউনিটে এক সপ্তাহে ৭২ জনের প্রাণহানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৯ এএম, ৯ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫০ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত এক সপ্তাহে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বাকিরা মারা গেছেন নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ার পর নমুনা পরীক্ষায় অধিকাংশের রিপোর্ট করোনা পজিটিভ আসে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামেক সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহে মৃত ৭২ জনের মধ্যে ৫৯ জনই করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। ৫৯ জনের মধ্যে ৩৬ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা এবং বাকি ২৩ জন রাজশাহীর। হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত এক সপ্তাহে (১ জুন সকাল ৬টা থেকে ৮ জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত) এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৭২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা করোনার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এর মধ্যে ১ জুন সাতজন, ২ জুন সাতজন, ৩ জুন নয়জন, ৪ জুন ১৬ জন (সর্বোচ্চ), ৫ জুন ৮ জন, ৬ জুন ছয়জন, ৭ জুন ১১ জন এবং সর্বশেষ ৮ জুন আটজন মারা গেছেন। করোনায় মৃত্যুর শতকরা হিসাব জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সপ্তাহে মারা যাওয়া ৭২ জনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৩৬ জন এবং রাজশাহীর ২৩ জন। সে হিসাবে রামেকে মৃত্যুর হার করোনার হটস্পট চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫০ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং রাজশাহীর ৩২ দশমিক ৩৯ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের রোগীদের অধিকাংশই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এজন্য সেখানকার রোগীর মৃত্যু হার বেশি বলে জানান ডা. সাইফুল ফেরদৌস।
এদিকে এ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আটজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজন করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মারা যান। মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে দুজনের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং একজন রাজশাহীর। বাকিরা মারা গেছেন নমুনা পরীক্ষার আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রাজশাহীর তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন এবং পাবনার একজন। সোমবার (৭ জুন) সকাল ৬টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তারা মারা গেছেন। এর মধ্যে আইসিইউতে দুজন, ৩ নং ওয়ার্ডে দুজন এবং ১৬, ২২, ২৫ ও ২৯ নং ওয়ার্ডে একজন করে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন। রাজশাহীর ১৬ জন, চাঁপাইয়ের ১৪ জন, নওগাঁর একজন এবং নাটোরের দুজন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ২৫৭ জন। এর মধ্যে রাজশাহীর ১২৭ জন, চাঁপাইয়ের ১০২ জন, নওগাঁর নয়জন, নাটোরের ১১ জন, পাবনার চারজন, কুষ্টিয়ার তিনজন এবং জয়পুরহাটের একজন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১৭ জন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫৭ জনের মধ্যে ১২৫ জনের করোনা পজিটিভ রয়েছে। বাকিদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে রাজশাহীতে আবারও করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েছে। সোমবার রাজশাহীর দুটি ল্যাবে রাজশাহীর ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১৭৪ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। রাতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, আগের দিনের চেয়ে তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়ে করোনা শনাক্তের হার হয়েছে ৪৫ দশমিক ০৭ শতাংশ, যা এর আগের দিন রোববার ছিল ৪১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর আগের দিন শনিবার ছিল ৫০ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং গত শুক্রবার এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। রামেক হাসপাতাল ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুই ল্যাবে তিন জেলার ৫৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৮০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭৪ জনের পজিটিভ এসেছে।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১০৫ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে এ জেলার নমুনা পরীক্ষা হয়। ফলাফল অনুযায়ী এ জেলায় শনাক্তের হার ৬০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এর আগে গত শনিবার এ জেলায় শনাক্তের হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৬ এবং গত শুক্রবার ছিল ৬১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এছাড়াও নওগাঁ জেলার একজনের নমুনা পরীক্ষা করে তার করোনা পজিটিভ এসেছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) পিসিআর ল্যাবে এ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ রোধে অব্যাহত রয়েছে অনির্দিষ্টকালের বিধিনিষেধ। সোমবার থেকে দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে বিকেল ৫টার পর দোকানপাটসহ সব বন্ধ রাখা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসনের ছয়টি ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং পুলিশের পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে রাজনৈতিক দলের নেতারাও। এছাড়া শর্তসাপেক্ষে লকডাউন শিথিল করে কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে।