পাইকগাছার ক্ষতিগ্রস্থ সকল বেড়িবাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত করলো এলাকাবাসী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৭ এএম, ৩০ মে,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৪ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর প্রভাবে পাইকগাছার ক্ষতিগ্রস্থ সকল বেড়িবাঁধ প্রাথমিক মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছে এলাকাবাসী।
আজ শনিবার দুপুরের দিকে প্রায় ৭ থেকে ৮শ’ লোক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে মেরামত কাজ প্রাথমিক ভাবে শেষ করে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধের কোন বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলকাবাসী। প্রশাসনও টেকসই বেড়িবাঁধের আদলে বাঁধ নির্মাণ করার জন্য সকরারের কাছে সুপারিশ আকারে প্রস্তাব পঠিয়েছে। এদিকে প্লাবিত এলাকার পানি শনিবার অনেকটাই নেমেগেছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার দু’দিনে ঘূর্ণিঝড় এবং ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী প্রভাবে জোয়ারের পানিতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে সরকারি হিসাব অনুযায়ী আর্থিকভাবে প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। উপজেলার সোলাদানা ইউনিয়নের হরিখালীর ৪টি পয়েন্ট এবং বয়ারঝাপা এলাকা থেকে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। অনুরূপভাবে লতা ইউনিয়নের পূর্ব লতা ও কাঠামারী, দেলুটি ইউনিয়নের চকরি-বকরি, কপিলমুনি ইউনিয়নের আগড়ঘাটা বাজার সংলগ্ন পদ্ম পুকুর, হরিঢালীর মালোপাড়া ও রাড়ুলী ইউনিয়নের মালোপাড়া থেকে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় সোলাদানা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ৫টি পয়েন্ট থেকে বাঁধ ভেঙ্গে যায়। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিন নতুন করে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় একদিকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়, অপরদিকে বাঁধাগ্রস্থ হয় মেরামত কাজ। অবশেষে শনিবার প্রায় ৭/৮শ লোক স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে দুপুরের দিকে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধের মেরামত কাজ প্রাথমিকভাবে শেষ করে। ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামতে সরকারি কোন বরাদ্দ ছাড়াই উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইজিপিপি শ্রমিক, আনসার সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মেরামত কাজ প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন করে। পাশ্ববর্তী লস্কর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কেএম আরিফুজ্জামান তুহিন মেরামত কাজ এগিয়ে নিতে প্রায় ২শ’ লোক নিয়ে কাজে অংশগ্রহণ করেন। বাঁধ মেরামতকাজে বালুর বস্তা দিয়ে সহযোগিতা করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু’র দিক নির্দেশনায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় উপস্থিত থেকে মেরামত কাজ তদারকি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার হক, ওসি এজাজ শফী, ওসি (তদন্ত) স্বপন রায়, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস ও পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন।
বাঁধ মেরামত প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, বাঁধের উপর নির্ভর করছে এই এলাকার মানুষের ভাগ্য। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইজিপিপি শ্রমিক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করা গেলেও এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়। একটু দুর্যোগ হলেই কিংবা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলেই এখানকার মানুষদের মধ্যে এক ধরণের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হয়। এ জন্য প্রাথমিক মেরামত কোন স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য টেকসই বেড়িবাঁধের কোন বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে টেকসই বেড়িবাঁধের আদলে পর্যায়ক্রমে এখানকার সকল বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ আকারে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। বাঁধ মেরামত কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইউএনও খালিদ হোসেন।