এমপি শিমুলের ভাগ্নের বিরুদ্ধে প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৯ পিএম, ২৫ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২০ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নাটোরের স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের ভাগ্নে ও বিশিষ্ট ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহানের ছেলে নাফিউল ইসলাম অন্তরের বিরুদ্ধে নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হানকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে নাটোর সদর থানায় মামলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৪ মে) নাটোর সদর থানায় মামলাটি করেন পাউবো’র প্রকৌশলী আবু রায়হায়।
নাফিউল ইসলাম অন্তরের বাবা মীর আমিরুল ইসলাম জাহান পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন ঠিকাদার এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত সোমবার বিকেলে সিংড়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডাকবাংলো মেরামত ও সংস্কার কাজের টাইলস নিয়ে আলোচনার জন্য ঠিকাদার মীর আমিরুল ইসলাম জাহান তার ম্যানেজার ও তার ছেলে অন্তরকে নিয়ে পাউবোর অফিসে যান।
এ সময় টাইলস শিডিউল অনুযায়ী দেয়ার বিষয় নিয়ে জাহানের সাথে প্রকৌশলীর বাক্য বিনিময়কালে প্রকৌশলীর ওপর চড়াও হয় আমিরুল ইসলামের ছেলে এবং নাটোর পৌর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নাফিউল ইসলাম অন্তর।
এ সময় প্রকৌশলী আবু রায়হানের গলা টিপে ধরে হত্যার চেষ্টা ও কিল-ঘুষি মারতে থাকেন অন্তর। এতে তার আর্তচিৎকারে সহকর্মীরা গিয়ে রায়হানকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে রাতেই অন্তরকে আসামি করে সরকারি কাজে বাধা এবং কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগে নাটোর থানায় মামলা দায়ের করেন ওই প্রকৌশলী।
এ ব্যাপারে নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, নাটোর জেলার সিংড়া পৌরসভা এলাকার আত্রাই ও নাগর নদীর ভাংগন হতে রক্ষা (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় অফিস ভবন ও পরিদর্শন বাংলো মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পায় রংপুরের আলমনগরের হাসিবুল হাসান। তার প্রতিনিধি হিসাবে কাজটি শুরু করেন নাফিউল ইসলাম অন্তর, আমিরুল ইসলাম জাহান ও ম্যানেজার রাজিব।
সেই কাজের টাইলস লাগানোর জন্য শিডিউল অনুযায়ী টাইলস এর নমুনা তাদের সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জাহান সাহেব তাকে ফোন করলে তিনি তার অফিসে আসতে বলেন।
সেই মোতাবেক ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম জাহান অন্তর ও ম্যানেজারকে নিয়ে পাউবো অফিসে যান। সেখানে শিডিউল মোতাবেক মানের টাইলস লাগানো নিয়ে মতানৈক্য হলে এ সময় অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেন ঠিকাদার আমিরুল ইসলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘গালিগালাজ না করে ভদ্রভাবে কথা বললে ঠিকাদারের ছেলে নাফিউল ইসলাম অন্তর উত্তেজিত হয়ে আমাকে গলা টিপে ধরে ও কিল-ঘুষি মারতে থাকে। এতে আমার ঠোঁট কেটে যায় এবং হাত, মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগে।’এছাড়া চাকুরি করলে হত্যার করার হুমকিও দেয় অন্তর তাই ঘটনার বিচার ও আমার নিরাপত্তার জন্য আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা বলতে নাফিউল ইসলাম অন্তরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে নাফিউল ইসলাম অন্তরের বাবা মীর আমিরুল ইসলাম জাহান বলেন, ‘আমার ছেলেকে তারা বিভিন্ন সময় কাজ দেওয়ার কথা বলেও নির্বাহী প্রকৌশলীর যোগসাজসে অন্যদের কাজ দিয়ে দিয়েছে। গতকালও কাজের কথা নিয়েই এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলী ও আমার ছেলে দুজনই চেয়ার থেকে পড়ে যায়। সেখানে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।’
নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় সরকারি কর্মকর্তার ওপর হামলায় কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি কাজে বাধা প্রদান, মারধর ও হত্যার হুমকির কথা উল্লেখ করে প্রকৌশলী আবু রায়হান মামলা করেছেন। আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।