মেয়ে নিয়ে হোটেলে রাত কাটিয়ে ধরা চবি ছাত্রলীগের সভাপতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫২ এএম, ১৯ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:৪৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মেয়ে নিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের রাত কাটাতে যাওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। গত (৫ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা রুবেল এক তরুণীকে নিয়ে নগরীর আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আবাসিক হোটেল নিউ স্টারে যান। ওই হোটেলটি স্থানীয়দের কাছে অপরাধ জগতের আখড়া হিসেবে পরিচিত। হোটেলটিতে মাদক সেবন ও পতিতাবৃত্তি চলে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল প্রথমে হোটেলটির অভ্যর্থনা কক্ষে আসেন। তার পেছন পেছন এক তরুণীকে আসতে দেখা যায়। তারা দুজন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে একই ফরম পূরণ করেন। ফরমটি পূরণ করেন রুবেল। ফরম পূরণ শেষে পাশে থাকা নারীকে দিয়ে রুবেল স্বাক্ষর করান।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, ফরমে স্বাক্ষর করে ওই নারী প্রথমে চলে যান হোটেলের নির্ধারিত কক্ষের দিকে। এ সময় রুবেল তার দুটি মানিব্যাগ থেকে টাকা দেন রিসিপশনে থাকা হোটেলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। এরপর রুবেলও ওই নারীর পেছন পেছন দ্রুত যেতে থাকেন। এরপর তারা একসাথে ওই হোটেলের ৩০২ নম্বর কক্ষে সময় কাটান।
৪০ সেকেন্ডের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, প্রথমে ওই নারী বেরিয়ে আসেন কক্ষ থেকে। পরে হোটেলটির কক্ষ থেকে বেরিয়ে লবিতে আসেন রুবেলও। তারা সিঁড়ি দিয়ে একসঙ্গে নামলেও দুইজন আলাদা হয়ে বেরিয়ে যান হোটেল থেকে।
ভিডিওটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রুবেল সতর্কভাবেই ওই হোটেলে প্রবেশ করেন। প্রথমে তিনি একা আসেন। এরপর আসেন ওই নারী। বের হওয়ার সময়ও তারা পৃথক পৃথকভাবে বেরিয়ে যান।
এদিকে হোটেলে পূরণ করা ফরমে সব তথ্যই ভুল দেন রুবেল। ওই ফরমে ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেলের নাম লেখা হয়েছে রাহুল হোসেন (৩৫)। এছাড়া পিতার নাম লেখা হয়েছে আব্দুল আলিম ও মাতার নাম রাহেলা আক্তার। রুবেলের বাড়ি ফেনী জেলায় হলেও স্থায়ী ঠিকানা লিখেছেন তিনি দক্ষিণ ঠাকুরপাড়া, কুমিল্লার বাসিন্দা। এছাড়া একই ফরমে তরুণীর নাম লেখা আছে সোহানা আক্তার (২৫)। এছাড়া তারা দুজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয় উল্লেখ করেছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যদি ওই নারী রুবেলের স্ত্রী কিংবা বোন হয়ে থাকেন তাহলে রুবেল আলাদাভাবে প্রবেশ করতেন না। আলাদা হয়ে বেরও হতেন না। কিন্তু শুধুমাত্র ফরম পূরণের সময়ই তাদের একত্রে দেখা গেছে। আবার নিজের বোন বা স্ত্রী হলে তিনি কখনোই মিথ্যা তথ্য দিতেন না হোটেলে পূরণ করা ফরমে। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জন্যই কেবল নয়, এই ঘটনাটি গোটা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্যই বিব্রতকর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবারের প্রতিটি কর্মী, শুভাকাক্সক্ষীর জন্যও বিব্রতকর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাখার সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, আমার বোন ঢাকা থেকে আসছিল। আমি আমার বোনকে নিয়ে হোটেলে গিয়েছি। হোটেলের রুম ভাল না হওয়াতে আমি আবার চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, আমি ছাত্রলীগ নেতা হয়েছি বলে কি মা-বোনকে নিয়ে চলাফেরা করতে পারবো না। এই রকম হলে তো আমার মা-বোনদের সাথে চলা বন্ধ করে দিতে হবে। আর যারা ভিডিও ফুটেজ নিয়েছে তারা অন্যায় করেছে। বোন হলে ফরমে ‘স্বামী-স্ত্রী’র উল্লেখ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলা ভুয়া ফরম ভাইরাল করছে। কিছু মানুষ আমার পেছনে লেগেছে, এগুলো তাদের কাজ। আপনি আইনের আশ্রয় নেবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আইনের আশ্রয় নেয়ার মতো কিছু করি নাই। এ বিষয়ে আমি আমার নেতার সাথে কথা বলেছি।
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা রেজাউল রুবেলের এই ভিডিও নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সস্তা হোটেলে নাস্তা করতে গিয়ে ধরা রাহুল হাসান! ফ্যাক্ট : আলোচিত ভিডিও। অন্য একজন ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, শীর্ষ পদধারী মানুষ। ১২০০ টাকার রুম মানায় না। তাও আবার জরাজীর্ণ পরিবেশ! অপর একজন মন্তব্য করেছেন, ‘মানুষের ব্যক্তিগত ভিডিও দেখা চোখের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর।’