পায়রার ভাঙনে নিঃস্ব অর্ধশত পরিবার, স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১২ পিএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ২২ অক্টোবর,মঙ্গলবার,২০২৪
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পায়রার অনবরত ভাঙনে বিলীন হয়ে প্রতিবছরই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, আবাদি জমিসহ ধর্মীয় উপাসনালয়। ফলে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে তীরের বাসিন্দারা।চলতি বছরে প্রায় অর্ধশত ঘর বাড়িসহ প্রায় দুই শতাধিক ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও নদী ভাঙনে ক্রমাগত ছোট হয়ে যাচ্ছে উপজেলার মানচিত্র। নদী ভাঙনরোধে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন না করা হলে বিলীন হয়ে যাবে পুরো গ্রাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার সর্বনাশা পায়রার কড়াল গ্রাসে ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয়হীনভাবে বসবাস করছেন। এ ছাড়াও প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি পরিবার কয়েকবার বসতঘর স্থানান্তর করেও শেষ রক্ষা হয়নি। এছাড়াও তাদের বসতভিটা, গাছপালা, পুকুর, মসজিদ, মন্দির, রাস্তা ঘাট, টিউবওয়েলসহ সবকিছু নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নি:স্ব হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে কিছু পরিবারকে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হলেও নিত্য নতুন ভাঙনের কারণে প্রতিনিয়ত আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে ভাঙন কবলিত নতুন নতুন পরিবার। এদিকে উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নের আলগী ও মুরাদিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মুরাদিয়ায় ক্রমাগত ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার।
আংগারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের স্থানীয় ভূক্তভোগী সুধান চন্দ্র মিস্ত্রী (৫০), সুকুরঞ্জন চন্দ্র মিস্ত্রী (৮০) বলেন, আমাদের বাড়ি এখান থেকে ২থেকে ৩ কিমি. উত্তরে ছিল। পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাবার আমলে ২বার এবং আমাদের আমলে ৩বার বসত বাড়ি স্থানান্তর করেও বর্তমানে ঝুঁকিতে আছি। আমাদের মত অনেকেই এখন বসত ঘর সহ সবকিছু ভেঙে সরকারি রাস্তার পাশে সরিয়ে নিতেছি।
আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহীন গাজী বলেন, গতকাল এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। সকালে খেয়াঘাট এলাকার বেশ কিছু এলাকা জুড়ে বিশাল ফাটল ধরে হঠাৎ নদী গর্ভে দেবে যায়। এতে ৩জনকে ট্রলার যোগে উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একজন মহিলাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এ যাবৎ এই এলাকার প্রায় দু'শ একর জমিসহ, ৩শতাধিক ঘর বাড়ি, ৩টি মসজিদ, ৪টি মন্দির, একটি সরকারি অফিসসহ রাস্তাঘাট পায়রা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গন এলাকার লোকজন অপরের বাড়ি ও পাকেরঘর, সরকারি রাস্তার পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছে। কিছু কিছু লোকজন অন্যান্য এলাকায় ও চলে গেছে।
আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান সোহরাব বলেন, বাহের চর মৌজায় দীর্ঘ দিন যাবৎ পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ভাঙ্গন কবলিত অসহায়দের পুনর্বাসন এবং স্থায়ীভাবে পাইলিং ও ব্লোক ফেলে নদী ভাঙ্গন রোধে যথাযথ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহীন মাহমুদ বলেন, এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে, দ্রুত নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড পটুয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন জানান, বাহেরচরের নদী ভাঙন রোধে এর আগেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি চলতি বছরের নভেম্বর মাসে আবার জিওব্যাগ স্থাপন করা হবে। এছাড়াও স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে।
দিনকাল/এসএস