পটুয়াখালীর এক উপজেলাতেই ১৪৪ জন ভুয়া ডাক্তার!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৭ এএম, ১৯ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:৪৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
এক জন-দুই জন নয়, ১৪৪ জন। তারা সবাই নামের আগে ডাক্তার পদবি লেখেন। কিন্তু তাদের কেউ ডাক্তার নন, কেউই এমবিবিএস পাস করেননি। কারও কাছেই নেই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদ। তবু তারা নামের আগে ডাক্তার লেখেন। সারাদেশে ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে একটি উপজেলার চিত্র এটি। আলোচিত এই উপজেলাটি হলো পটুয়াখালীর বাউফল। এ উপজেলার ১৪৪ জন ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন পটুয়াখালীর দ্বিতীয় আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন। গত ১৫ নভেম্বর এই সমন জারি করা হয়। আদালত ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদালত তার আদেশে বলেছেন, ‘নিবন্ধন ব্যতীত ভুয়া পদবি ব্যবহার করে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা প্রদান ও প্রতারণামূলকভাবে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়াকে আদালত সমীচীন মনে করেন। এ কারণে এই ১৪৪ জন ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১০-এর ২২/২৮/২৯ ধারার অপরাধ ও দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮-এর ধারা ১৯০(১)(সি)-এর অধীন আমলে গ্রহণ করে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করা হোক।’
জানা গেছে, চলতি বছরের ২৭ জুলাই পটুয়াখালীর বাউফল থানার জিআর মামলায় (নং ১৭১/২০) হাজতি ইব্রাহিমকে আদালতে হাজির করেন তার আাইনজীবী। একইসঙ্গে একটি প্রেসক্রিপশন দাখিল করে আসামিকে অসুস্থ বলে দাবি করেন তিনি। আদালত পর্যালোচনা করে দেখেন যে, প্রেসক্রিপশন প্রদানকারী ডাক্তার মাহমুদা বেগম কোনও এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ডাক্তার নন। এমনকি বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০- এর অধীনে নিবন্ধিতও নন। প্রেসক্রিপশনে ডাক্তার মাহমুদা তার ডিগ্রি হিসেবে বিভিডিএ-ঢাকা উল্লেখ করেছেন।
আদালত সেদিনই ডাক্তার মাহমুদার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পাশাপাশি পটুয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শিহাব উদ্দীন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাউফল উপজেলায় অনিবন্ধিত অন্য কোনও ডাক্তার রয়েছে কিনা, তা ন্যায়বিচারের স্বার্থে তদন্তের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে আদেশ দেন। এজন্য তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০-এর অধীন নিবন্ধিত নন কিন্তু ডাক্তার পরিচয় দিয়ে বেআইনিভাবে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন, তদন্তের মাধ্যমে এমন ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রণয়ন করে আদালতের কাছে জমা দিতে বাউফল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি পটুয়াখালীর বাউফল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ১৪৪ জন ভুয়া ডাক্তারের একটি তালিকা আদালতে জমা দিয়েছেন। বাউফল সার্কেলের সেই এএসপি ফারুক হোসেন বর্তমানে গলাচিপা সার্কেলে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৪৪ জনের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান করে আমরা ১৪৪ জনের একটি তালিকা তৈরি করে জমা দিয়েছি। এরা কেউই এমবিবিএস ডিগ্রিধারী নন। ফলে তাদের বিএমডিসির সনদ থাকার কোনও সুযোগই নেই। এদের অনেকেই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পল্লি চিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিন্তু এরা সবাই নামের আগে ডাক্তার লেখেন।’
ভুয়া ডাক্তারের তালিকায় থাকা প্রথম ১০ জনের মধ্যে সাত জনের সঙ্গে কথা বলেছেন একটি গণমাধ্যম। তারা সবাই পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কাছিপাড়া ও বাহেরচর এলাকায় ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখেন। এদের মধ্যে আলাউদ্দিন নামে একজন ইউনানি অ্যান্ড আয়ুবের্দিক মেডিসিন থেকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ ও সনদ নিয়ে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করেন।
সোবাহান নামে এক ব্যক্তি জানান, তার কোনও সনদ নেই। তার বাবা গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন। বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তিনি ডাক্তারি বিদ্যা অর্জন করেছেন। হাবিবুর রহমান নামে আরেকজন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের একটি সনদ নিয়েছেন। আব্দুর রশিদ মাস্টার মূলত একজন শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনিও জেলা সিভিল সার্জনের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের সনদ নিয়ে নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করেন।
শামীম হোসেন নামে কাছিপাড়া বাজারের তালিকাভুক্ত আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে এলএমএএফ নামের একটি স্বল্পমেয়াদি কোর্স সম্পন্ন করেছেন। তিনিও নামের আগে ডাক্তার লেখার কথা স্বীকার করেছেন গণমাধ্যমের কাছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল-২০১০-এর আইনের ২২(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘অন্য কোনও আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীন নিবন্ধন ব্যতীত কোনও মেডিকেল চিকিৎসক বা ডেন্টাল চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে, অথবা নিজেকে মেডিকেল চিকিৎসক বা ক্ষেত্রমতে ডেন্টাল চিকিৎসক বলে পরিচয় প্রদান করতে পারবেন না।’ আর এই আইনের ২২(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি উপধারা (১)-এর বিধান লঙ্ঘন করলে ওই লঙ্ঘন হবে একটি অপরাধ এবং সেজন্য তিনি তিন বছর কারাদন্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডনীয় হবেন।’ এছাড়া একই আইনের ২৯ ধারায় ‘ন্যূনতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রিপ্রাপ্তরা ব্যতীত অন্য