সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসার নজির আছে - মান্না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:২৪ এএম, ১১ মে,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা ও তাঁর চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয় নিয়ে গত কয়েক দিনে সরকারের পক্ষ থেকে যা করা হয়েছে, তাতে আমি বিস্মিত এবং উদ্বিগ্ন।
আজ সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে আইনি বাধার কথা আইন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, তার ব্যত্যয় ঘটিয়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামির বিদেশে চিকিৎসার নজির এ দেশে রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরও জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিল সবার আগে। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও তেমনটি আমি আশা করেছিলাম।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিএনপির নেতাদের কাছ থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি, বেগম খালেদা জিয়ার ফুসফুস এবং পেটে পানি এসেছে; যা ৭৬ বছর বয়সী একজন মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক। এই মুহূর্তে ওনার সার্বক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে নাজুক অবস্থা তাতে দেশে থেকে ওনার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী এবং একজন বীর উত্তমের স্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সরকার তাদের প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হতে পারল না।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পর এসেও সরকার মানবিক মূল্যবোধের ন্যূনতম পরিচয় দিতে ব্যর্থ হল। যে প্রতিহিংসার সংস্কৃতি বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার চালু করেছে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা ভেবে আমি শঙ্কিত। সরকার তার অবস্থান থেকে সরে এসে মানবিক দিক বিবেচনায় বেগম খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে এবং পাশাপাশি তাঁর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন মাহমুদুর রহমান মান্না। অন্যথায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
জাতীয় পাটির্ : নানা রোগে আক্রান্ত এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন ২০ দলীয় জোট নেত্রী জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ না দেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফা জামাল হায়দার ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আহসান হাবীব লিংকন।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন ৭৬ বছরের বয়স্কা নারী। সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনি। এছাড়াও আরো বেশ কিছু জটিল রোগাক্রান্ত খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ৩ মে, ২০২১ তাঁর শ্বাসকষ্ট হলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তাঁর অবস্থা বেশ সঙ্কটাপন্ন। বর্তমান সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। তারা তাঁকে বিদেশে উন্নত ও সুচিকিৎসার সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ মানবতার কাছে আইন কোনো বিষয় নয়। আমরা সরকারের এহেন অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিবৃতিতে তারা বলেন, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার মহামারি করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিষয়টি মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে পারতো। তাঁর স্বামী সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান ছিলেন। দেশে দেশে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক এই ক্ষমা করার বিধান রয়েছে শুধু চরম মানবিক বিষয় বিবেচনার জন্য। যেমন স্কটল্যান্ডের লকারবিতে বিমান উড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত লিবিয়ার অপরাধী আবদেল মেগরাহিকে ২০০৯ সালে ক্ষমা করা হয়েছিল ক্যানসারের কারণে, তার অবধারিত মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলো স্বজনের সঙ্গে কাটাতে দেয়ার মানবিক দিক বিবেচনা করে। শুধু তাই নয়, দন্ড স্থগিত করে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠানো নজিরবিহীন ঘটনা নয়। থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, পাকিস্তানসহ অনেক দেশে চিকিৎসার জন্য অনেক সাবেক রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের বেলায় এমনটি ঘটেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ৭ বছরের সাজা হলেও লাহোর হাইকোর্ট তাকে জামিন ও সাজা স্থগিত করে বিদেশ ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুটো মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে সেগুলো প্রাতিষ্ঠানিক বা রাষ্ট্রীয় কোনো কেলেঙ্কারির মতো বিষয় নয়। এমতাবস্থায় আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো, খালেদা জিয়া এমন কোনো মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত আসামি নন। তাঁর প্রতি মানবিক হোন। তিনি বয়স্কা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি তাঁর ছোটো ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তাঁর বড় ছেলে দেশনায়ক তারেক রহমানও নির্বাসনে। তাঁকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দি রাখা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া কতটা অসহায় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমরা বিশ্বাস করি সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেবে। তা না হলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।