ইট ভাঙ্গা মেশিন ফরিদপুর শহরবাসীর যন্ত্রণার অন্যতম উপাদন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৮ এএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৬ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
ফরিদপুর পৌরসভা শহরের মধ্যে ইটা ভাঙ্গা নিষিদ্ধ করে মাইকিং করেছে। ওই মাইকিংএ বলা হযেছে ইট ভাটা থেইে ভেঙ্গে আনতে হবে। শহরের মধ্যে ইট ভাঙ্গা চলবে না।
এ ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শহরে ইট ভাঙ্গা অব্যাহত রেখেছে বহুতল বিশিষ্ট বিভিন্ন অট্টালিকা নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। কোন কোন ক্ষেত্রে পৌরসভার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন সমাধান মিলছে না। এই প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে দিন রাত মিলিয়ে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা বিরতিহীন ভাবে মেশিন দিয়ে ইট ভাঙ্গা হচ্ছে । এর ফলে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণসহ এক নাড়কীয় যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে শহরবাসীকে।
গতকাল শনিবার সকালে শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকার উকিল পাড়া সড়কে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত পাশাপাশি নির্মানাধীন দুটি বহুতল ভবন ‘পার্থিব নিলয়’ ও ‘নাহার গার্ডন’-এ ইট ভাঙ্গা শুরু করে। ওই এলাকার লোকদের ঘুম ভাঙ্গে এ ইট ভাঙ্গার শব্দে।
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে গত শুক্রবার পার্থিব নিলয়-এ নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ভোর ৬টা থেকে ইট ভাঙ্গা শুরু করে বিরতিহীন ভাবে এ ইট ভাঙ্গা শেষ হয় রাত ৮টার দিকে। শনিবার সকাল থেকে পার্থিব নিলয় ইট ভাঙ্গা শুরু হয়। একই সাথে পাশের নাহার গার্ডেনও ইট ভাঙ্গা শুরু করে।
পার্থিব নিলয়ে কর্মরত শ্রমিকদের প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন মো. হাশমত আলী মোল্লা। তিনি নিজেকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে দাবি করে বলেন, শহরে ইট ভাঙ্গা মেশিন দিয়ে ইট ভাঙ্গা নিষিদ্ধ করেছে পৌরসভা, এ কথা তিনি জানেন না।
পার্থিব নিলয় এর সত্ত্বাধীকারী ফরিদপুর সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক খন্দকার বাবুল হোসেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম ভাটা থেকে ইট ভেঙ্গে আনতে। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, আমি জানি যে লোকালয়ে এ ভাবে ইট ভাঙ্গলে এলাকাবাসীর জন্য কি জাতীয় দুর্বিসহ অবস্থার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আগামীতে এ বিষয়ে আমরা সতর্ক হব।
শহরের ঝিলটুলী মহল্লার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান মনির মিয়া বলেন, ঝিলটুলীর মত ঘন বসতিপূর্ণ জায়গায ইট ভাঙ্গা হয় দিনের ১৮-২০ ঘন্টা সময়। কানের ভিতর ইট ভাঙ্গার শব্দে বিরক্তিকর আওয়াজই পাওয়া যায়।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এইচ এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, ৬০ ডেসিমেল এই উপর শব্দ হলে সেটি শব্দ দূষণের আওতায় আসে। পাশাপাশি পরিবেশ কতটা দূষিত হচ্ছে সেটি মাপারও যন্ত্র আছে। কিন্তু এ যন্ত্র শুধু ঢাকায় আছে। ফলে জেলা পর্যায়ে তার সুযোগ পাওয়া জটিল। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধিনে ২০০৬ সালের বিধিমালার ১৮ (২) ধারা অনুযায়ী শব্দ ও পরিবেশ দূষণ রোধে আদালত পরিচালনা করার সুযোগ আছে।
ফরিদপুর নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমান আলী মোল্লা বলেন, পৌরসভা এ বিষয়ে জোড়ালো ভাবে মাইকিং করলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। ইট ভাঙ্গার দায়িত্ব মালিকদের, শ্রমিকদের নয়। এ ব্যাপারে শ্রমিকদের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, শহরে মেশিন দিয়ে ইট ভাঙ্গা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়য়ে নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ নির্দেশনার পর কেউ তা লংঘন করে শহরে মেশিন দিয়ে ইট ভাঙ্গলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।