ফরিদপুরে ডিবি হেফাজতে আসামির মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২১ এএম, ৩ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ফরিদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকাকালীন অবস্থায় অবুল হোসেন মোল্লা (৪৬) এক আসামির মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকালে ফরিদপুরের ডিবি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই আসামির এ মৃত্যুর সাথে ‘পুলিশের কোন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই’ -বলে প্রতিবেদন দিয়েছে এ ঘটনার তদন্তে গঠিত চার সদস্যের কমিটি।
এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান। আজ রবিবার (২মে) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশে সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। তাতে ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলা, ওই দিন সালথার ঘটনায় আবুল হোসেনসহ ১০ জন আসামির রিমান্ড চলছিল ডিবি কার্যালয়ে। শনিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে হাজতখানার বাথরুমের মধ্যে শব্দ হলে কর্তব্যরত কনস্টেবল আক্তারুজ্জামান শব্দের কারন জানতে চান। আবুল হোসেন তখন বাথরুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখন কনস্টবেল ও অন্য আসামিরা আবুল হোসেনের কোন সমস্যা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবুল হাসান জানান কোন সমস্যা হয়নি। ভোর ৫ টা ২৫টার দিকে পুণরায় আবুল হোসেন বাথরুমে যান। তিনি বাথরুম থেকে দীর্ঘ সময় বের না হলে কনস্টেবল আকতারুজ্জামান অন্য আসামিদের বিষয়টি দেখতে বলেন। অন্য আসামিরা দেখেন বাথরুমের দরজা খোলা এবং আবুল হোসেন বাথরুমে পড়ে আছেন ও বমি করছেন। দ্রুত আবুল হোসেনকে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বায়োজিদ রহমানকে দিয়ে সুরতহাল করে আবুল হোসেনের মৃতদেহ ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। ময়না তদন্ত শেষে মৃতের ভাতিজা ইয়াদ আলী মৃতদেহটি গ্রহন করেন। শনিবার রাতেই সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের কবরাস্থানে আবুল হোসেনের মৃতদেহ দাফন করা হয়।
পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামন বলেন, পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক রমজান খন্দকার বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলাদায়ের করেছেন। এ ঘটনার তদন্তে শনিবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশাকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘আবুল হোসেনের মৃত্যুর সাথে পুলিশের কোন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্পর্ক নেই’ বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, একই সাথে ওই কমিটি পাঁচটি সুপারিশ করেছে।
এ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) জামাল পাশা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তরিকুল ইসলাম. ডিবি পুরিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুনীল কর্মকতার, ফরিদুপর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাা (ওসি) এম এ জলির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত আবুল হোসেনকে গত ৫ এপ্রিল রাতে সালথায় সংঘটিত সহিংস ঘটনার জন্য গত ১৬ এপ্রিল গ্রেপ্তার করে পুলিশ । তিনি ওই ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা এজাহাভুক্ত আসামি ছিলেন না। তদন্তে তার নাম আসায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। আদালত তার পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ২৮ এপ্রিল আবুল হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এই রিমান্ডে থাকা অবস্থায় ডিবি পুলিশের হাজত খানায় মারা যান আবুল হোসেন। আবুল হোসেন মোল্লা সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের গোপালীয়া গ্রামের মৃত ইমানউদ্দিন মোল্লার ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং দুই ছেলে ও এক মেয়ের বাবা।
তবে আবুল হোসেনের মেয়ে তানিয়া আক্তার দাবি করেছেন, ‘তার বাবাকে কোন অপরাধ ছাড়াই রিমান্ডে নিয়া মাইরা ফেলান হইছে। তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুর পর তাদের আর দেখার কেউ থাকলো না।
এদকে গত ৫ এপ্রিল রাতে সালতায় এসিল্যান্ডের গাড়ি থেকে মারধোর ও পরে গুজব রটিয়ে সংঘটিত সহিংস তান্ডবের ঘটনায় ডিজিটাল আইনসহ বিভিন্ন আইনে মোট আটটি মামরা হয়েছে। এ আটটি মামলার এজাহারনামীয় আসামি ৩৭০জন। এ পর্যন্ত ১০৭ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে এজাহার নামীয় ৩১ জন আসামি রয়েছে। এ পর্যন্ত ১২জন আসামি আদালতে স্বীককারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।