কাজ হস্তান্তরের আগেই ভেঙ্গে পড়লো ওজোপাডিকোর লোহার ডেকোরেশন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৪ পিএম, ২৮ এপ্রিল,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৭ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুষ্টিয়ায় গত চার মাস আগে থেকে শুরু হওয়া ওজোপাডিকো মূল গেটের উপরের লোহার ডেকোরেশন (১০ফিট লম্বা) গতকাল সকাল আনুমানিক ১১ টার দিকে হঠাৎ ভেঙে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান পলাশ এন্টারপ্রাইজের সোহাগ এর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, মূল গেটের কাজ চলমান। তিনি এখনো কাজটি হস্তান্তর করেননি। কাজটি যেহেতু হস্তান্তর করেন নি, তাহলে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন কেন? প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার কর্মকর্তাদের কারণেই এটা খুলে দেওয়া হয়েছে।
কাজটির বাজেট, সময়কাল এবং সমাপ্তির তারিখ জানতে চাইলে তিনি জানান, বাজেট ৩৬লাখ এর ১০হাজার কম, শুরুর তারিখটা তার তেমন মনে নেয়, কাজের সমাপ্তির এখনো ২মাস বাকি আছে।
আপনি কি মূল ঠিকাদার? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সে এই কাজটি খুলনার এক ঠিকাদারের থেকে কিনে করছেন। তখন সেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, "বড় বাড়ি ঠিকাদার, নাম শুনলে চাপ নিতে পারবেন তো!" তখন প্রতিবেদক- হা পারবো বলেন, তার মোবাইল নম্বরটা দেন বললে, সোহাগ বলেন- আমি তার সাথে কথা বলে নম্বরটা দিচ্ছি। এই বলে ফোন কেটে দেন এবং এখন পর্যন্ত আর কল করেননি।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া সহ খুলনা বিভাগের চার জেলায় ওজোপাডিকোর মূল গেট নির্মাণের কাজ চলছে। কুষ্টিয়া ওজোপাডিকোর মূল গেটের কাজ শুরু হয়েছে গত চার মাস পূর্বে। গেটের সিংহভাগ কাজ ইতিমধ্যে শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। হটাৎ গতকাল বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে লোহার ১০ফিট লম্বা ডেকোরেশন ভেঙ্গে নিচে পরে। এসময় অল্পের জন্য বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পায় গেটের নিচ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক পথচারী।
তারা আরো বলেন, কাজের মান ভালো না হওয়ায় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা আরো জানায়, লোহার রডের তৈরি লম্বা ডেকোরেশন লাগানোর জন্য যে রয়েল বোল্ট ব্যবহার করা হয়েছে সেটি এতো ভারী একটি বস্তুর সাথে কোনোভাবে যায়না। গেটটি নির্মাণের শুরু থেকেই নিম্নমানের কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। বার বার ভালো করে কাজ করার জন্য বললেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।
ওজোপাডিকোর এক কর্মচারী রিন্টু জানান, "এ গেটের যে পরিস্থিতি আমরা যে কখন মরব তার কোন নিশ্চয়তা নাই।" যেকোনো সময় আমরা মরতে পারি, আমাদের জীবনের কোন দাম নেই।
ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক হিসাব ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, এই কাজটি খুলনা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এবং এর হিসাবটিও ওখানেই করা হচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের তেমন কোনো তথ্য জানা নাই বলে এসি ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।
ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী(এসি) জাহান-ই-শবনম জানান, তার বর্তমান কর্মস্থলের চলমান মূল গেটের সাথে সংশ্লিষ্ট আর্থিক, প্রশাসনিক ও বাস্তবায়নের কোন বিষয় সম্পর্কে তিনি অবগত নন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন তিনি। তাছাড়া আজকের দুর্ঘটনার বিষয়ে তিনি জানতেন না। সাংবাদিকরা প্রবেশের ৫মিনিট পূর্বে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন।
কুষ্টিয়া ওজোপাডিকোর মূল গেটের প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর প্রকৌশলী মিজান সাহেবের মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আজকের দুর্ঘটনার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে তার কথা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছে। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে কাজটির বাজেট, সময়কাল এবং সমাপ্তির তারিখ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাগজ না দেখে এগুলো বলা সম্ভব হবে না। তিনি সাংবাদিকদের তার ঝিনাইদহে কার্যালয় যাওয়ার জন্য বলেন। সেখানে গেলে তিনি সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাবেন বলে জানান।