পীরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়ীর ব্যাপক ক্ষতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১২ পিএম, ২৫ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০৮ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় প্রচন্ড কালবৈশাখীর ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ ৫ ইউনিয়নের কৃষক ও সাধারন মানুষের দুশ্চিন্তা কাটছেনা। তারা এখনও পায়নি কোন সরকারী সহায়তা। কিভাবে তারা ক্ষতি গ্রস্থ ঘরগুলো সংস্কার করবে আর কিভাবেই বা ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিবে এ চিন্তায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
একাধিক সুত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার পীরগঞ্জের ১৫ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রচন্ড বেগে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে। এতে উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী, কুমেদপুর, বড়দরগাহ, শানেরহাট ও মিঠিপুর ইউনিয়নের উঠতি বোরো ধান, ভুট্টা, মরিচ, পটল, শসা, কচু সহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সেই সঙ্গে ২ সহস্রাধীক বাড়ী ঘরের টিনের চালা শিলা বৃষ্টিতে ফুটো হওয়ায় ঘর গুলো বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্য গাছ ও ঘরবারি।
গুর্জিপাড়া গ্রামের আতোয়ার, মঞ্জুর, পার্বতীপুরের মজিদ, চাপাবাড়ীর রফিকুল, বেড়াখাই এর জালাল সহ বেশ কিছু সংখ্যক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শিলাবৃষ্টির কারনে তাদের জমির উঠতি বোরো ধানের ৮০ শতাংশ জমিতেই ঝরে পড়েছে।
চাপাবাড়ীর নুরুল আমিন জানান তার ৫০ শতক জমির পটল ও শসা সমুদয় বিনষ্ট হয়েছে। গুর্জিপাড়া লেবু জানান, তার ৬০ শতক জমির ভুট্টার ৬০ শতাংশ বিনষ্ট হয়েছে। সর্বপরি উল্লেখিত ইউনিয়নের সব কৃষকের জমির ফসলের একই অবস্থা । ভগবানপুরের লাল মিয়া তার ধান ক্ষেতের ক্ষতি প্রত্যক্ষ করে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও সাধারন মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়ায় জানান, সাম্প্রতিক সময়ের লকডাউন পরিস্থিতি ও রোজার মধ্যে তাদের ফসলের এ ক্ষতি তাদের দিশেহারা করেছে। এই মুহুর্তে ঘর গুলো সংস্কার করার নেই অনেকের সামর্থ। ঘর গুলোতে পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি থেকে পরিত্রানের চেষ্টা করছেন। ফসলের ক্ষতিতে আগামী দিন গুলো তাদের কি ভাবে কাটবে? সংসারই বা চলবে কি ভাবে? এটাই এখন তাদের বড় দুশ্চিন্তা।
ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নেও ফসলের ও বাড়ী ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের জন্য আর্থিক সহায়তার বিকল্প নেই। এছাড়াও ঘর গুলো সংস্কারে সহায়তা দিলে কৃষক ও সাধারন মানুষ কিছুটা হতাশামুক্ত হবে।
কুমেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশফাক হোসেন ফুয়াদ বলেন, কৃষক ও ঘর বাড়ীর ক্ষতিতে আমি উদ্বিগ্ন। আমি তাদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে তাদের জন্য সাধ্যমত আর্থিক সহায়তা দেয়া সম্ভব হলে তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে।
পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামান সরকার বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন প্রাথমিক ভাবে এ শিলা বৃষ্টিতে পীরগঞ্জে প্রায় ৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান,পাট, কলা ও শাকসব্জি বিনষ্ট হয়েছে বলে মনে করছি। সে সঙ্গে আমরা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জমিতে বোরো ধানের ৮০ শতাংশ পেকে গেলে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রনয়নের কাজ চলছে। জরুরী ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা দেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রাণী রায় ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।