পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে হাসপাতালে নেয়া মা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩০ এএম, ২৪ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১১ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে মোটরসাইকেলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সেই যুবকের মা রেহেনা পারভীন (৫০) সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে তিনি ছাড়পত্র পান। দুপুর ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে ছেলে জিয়াউল হাসানের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন।
বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে রেহেনা পারভীন (৫০) ছেলে জিয়াউল হাসান ও রাকিব হাসান হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্ন দেখান। এ সময় রেহেনা পারভীন বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময় ছেলেরা যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তা আমার কাছে বেঁচে ফেরার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার সাহস ও মনোবল শক্ত করেছিল। করোনাকে জয় করার জন্য পরিবারের সবার সহযোগিতা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সবাই যেন এটাই করেন।’
রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাসিন্দা। তিনি নলছিটি বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ১০ দিন ধরে বাড়িতে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ওইদিনই তার দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট। কষ্ট কমাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে আনেন ছেলে জিয়াউল হাসান। মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেন। তবু অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। এ অবস্থায় মাকে বরিশালে নিতে তিনি অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো গাড়ির খোঁজে নামেন। যানবাহন না পাওয়ায় নিজের মোটরসাইকেলে মাকে বরিশালে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন জিয়াউল। গামছা দিয়ে পিঠের সঙ্গে শক্ত করে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি বাঁধেন। এরপর মাকে পেছনে বসিয়ে তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেন। এভাবে ১৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শনিবার সন্ধ্যায় পৌঁছান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পাশে আরেকটি মোটরসাইকেলে করে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিব। তাদের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
রেহেনা পারভীন হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার পুনরায় নমুনা পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ আসে। ছেলে ব্যাংক কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান মায়ের সঙ্গেই ছিলেন এত দিন।
ছেলে জিয়াউল হাসান গতকাল শুক্রবার দুপুরে বলেন, ‘মা এখন সুস্থ। তবে তার চিকিৎসা ছিল খুব ব্যয়বহুল। প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকা লেগেছে। তারপরও আজ নিজেদের বিজয়ী লাগছে, আনন্দ লাগছে। সুস্থ হয়ে মা আবার আমাদের সঙ্গে বাড়ি ফিরতে যাচ্ছেন, এ জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। মায়ের এবং আমাদের এই দুঃসময়ে আমি সবার সহযোগিতা পেয়েছি। বিশেষ করে গণমাধ্যমের কাছে বেশি কৃতজ্ঞ।’