১৪ দিন পর ভোলায় মাথাবিহীন দুটি পোড়া লাশের পরিচয় মিলেছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১২ পিএম, ২৩ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
১৪ দিন পর ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির বাগান থেকে অজ্ঞাত মাথাবিহীন আগুনে পোড়া দুটি লাশের পরিচয় মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছেন জমি বিক্রির টাকা লেনদেন নিয়ে এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এই হত্যাকান্ডের মূল হোতা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের মহিবুল্লাহ বাসার বাথরুমের ট্যাংকি থেকে মাথাবিহীন পোড়া দুটি লাশের মাথা উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া পোড়া লাশ দুটি হলো-দুলাল দাস ও অমিত দাসের। এরা দুইজন সম্পর্কে আপন ভাই। তাদের বাড়ি আসলামপুর ইউনিয়নে।
পুলিশ জানায় গ্রেফতারকৃত সিরাজুল ইসলামের তথ্যানুযায়ী তিন বছর আগে বিল্লাল ও সিরাজুল ইসলাম দুলাল দাস ও অমিত দাসের জমি ও বাড়ি ক্রয় করে। বায়না হিসেবে তাদেরকে ৩ লক্ষ টাকা দেয় বিল্লাল ও সিরাজুল ইসলাম। বাকী টাকা দলিল সম্পাদনের সময় দেওয়া হবে। হঠাৎ দুলাল ও অমিত দাস পরিবার নিয়ে রাতের আধাঁরে ভারত চলে যায়। এরপর তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় দলীল সম্পাদান করে বাকী টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাদেরকে আসতে বলেন বিল্লাল ও সিরাজুল । বাকী টাকা নিতে গত বছরে দুলাল দাস ও অমিত দাস বাংলাদেশে আসে। সিরাজুল ইসলাম ও বিল্লালের কাছ থেকে বাকি টাকা না পাওয়ায় তারা দলিল সম্পাদন করেনি।
বাকী টাকা দেওয়ার কথা বলে সিরাজুল ইসলাম ও বিল্লাল গত ৭ এপ্রিল উপজেলার আসলামপুর ইউনিয়নের সুন্দরী খালের উত্তর পাড়ে ভুঁইয়াগো পরিত্যক্ত বাগানে ডেকে নেয় দুলাল দাস ও অমিত দাসকে। ধারণা হচ্ছে এই সময়ে তাদের দু’জনকে মাথা কেটে হত্যা করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
পরদিন ৮ এপ্রিল জনৈক কৃষক সকালে মাথাবিহীন পোড়া লাশ দুটি দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠান।
ওই ঘটনায় চরফ্যাশন থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) নুরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই হত্যাকান্ডে রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধান চালায় পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিল্লালের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশের অভিযানে সিরাজুল ইসলাম আটক হয়। এসময় বিল্লালকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান,লাশের সাথে থাকা সাইড ব্যাগে ব্যবহ্নত মালামাল আংশিক পুড়ে যাওয়া মালামাল ও হত্যাকান্ডের মূল হোতা সিরাজুল ইসলামের তথ্যানুযায়ী প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে লাশ দুটি দুলাল দাস ও অমিত দাসের।
চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মনির হোসেন মিয়া বলেন, আটক সিরাজুল ইসলামের তথ্যানুযায়ী আছলামপুর ইউনিয়নের মহিবুল্লাহ বাসার বাথরুমের ট্যাংকি থেকে মাথা দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। দুটি মাথা বিকৃত অবস্থায় ছিল। যেস্থান থেকে মাথা উদ্ধার হয়েছে তার একশত গজ দ‚র থেকে গত ৮ এপ্রিল মাথাবিহীন পোড়া দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল।
তিনি আরো জানান,আসামীরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছেন ও হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত ছেনি উদ্ধার করা হয়েছে। মাথা দুটির ডিএনএ সংগ্রহ করে ভোলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এছারা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(চরফ্যাশন সার্কেল) শেখ সাব্বির হোসেন বলেন,গত দুই সপ্তাহের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অজ্ঞাতনামা লাশ দুটি পরিচয় ও তাদের খুনীদের শনাক্ত করতে পেরেছি। খন্ডিত মস্তক ও হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত ছেনি উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আসামীরা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে।