হাঁপিয়ে উঠছে লাশবাহী ফ্রিজার ভ্যান সেবা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০২ এএম, ১৯ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২৮ এএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
‘এরকম চাপে আগে পড়ি নাই। আমাদের ২৪টা গাড়ি সারাদিন রাস্তায়। বেশিরভাগই করোনার লাশ টানে। কুলাইতে পারতেসি না।’ এভাবেই নিজের অবস্থার কথা জানালেন লাশবাহী ফ্রিজিং ভ্যানের চালক নাইম। দেশে চলমান কঠোর বিধিনিষেধে রাস্তায় জনমানুষের দেখা মেলে না। কিন্তু পথজুড়ে ছেয়ে থাকে লাল-নীল বাতির অ্যাম্বুলেন্স। কেউ করোনা আক্রান্ত রোগী নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে, কেউবা হাসপাতাল থেকে ফিরছেন স্বজনের লাশ নিয়ে। লাশ দাফনের পরই খালি হচ্ছে ফ্রিজিং ভ্যান। তারপর আবার ছুটে যাচ্ছে অন্য কোনও লাশ বহনে। অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়াটাও এখন রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে ৪৮ ঘণ্টায় (১৫-১৭ এপ্রিল) সরকারি হিসাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০২ জন। মহামারি শুরুর পর একদিনে শত মৃত্যু আর দেখেনি বাংলাদেশ।
এর আগে দিন মারা যান ৯৪ জন। তার আগের দিন ৯৬ জন। ১৬ এপ্রিল দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১৫ দিনে মারা গেছেন অন্তত এক হাজার মানুষ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মৃত্যু বেড়েছে ৩০ শতাংশ। ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির দেওয়া তথ্যমতে, ফ্রিজিং ভ্যানগুলো যে লাশগুলো বহন করছে, তাদের ৯০ শতাংশই করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির।
আলিফ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী মমিনুল বলেন, প্রায়ই এমন হয় যে, আমরা গাড়ি দিতে পারছি না। কারণ গাড়ি ফ্রি থাকে না। আমাদের ছয়টা ফ্রিজিং গাড়ি। প্রতিদিন গড়ে ৬-৮টা লাশ বহন করে। ঢাকার মধ্যে দেখা যায় দিনে ২-৩ বারও বহন করতে হচ্ছে। বেশিরভাগই করোনায় আক্রান্ত লাশ। উত্তরার আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের ম্যানেজার বললেন, আমরা সেবা দিয়ে কুলোতে পারছি না। খুবই কঠিন সময় কাটাচ্ছি। একটা গাড়ি ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে চলছে। দিনে ২-৩ টা লাশ বহন করতে হয়। ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, অ্যাম্বুলেন্স ও ফ্রিজার ভ্যান দুটোই এখন বেশি দরকার হচ্ছে। আমাদের চালক ও কর্মীরা খেয়ে না খেয়ে ডিউটি করছে। তাদের সুরক্ষার বিষয়েও আমরা কাজ করছি। সরকার কিংবা কোনও সংস্থা থেকে আমাদের কিছু দেওয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, এক মাসে গাড়ির চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। আগে ঢাকার বাইরে থেকে যে রোগীরা আসতেন চিকিৎসা নিতে, এখন ওই রোগী নেই বললেই চলে। এখন যেসব কল আসছে তার ৯০ শতাংশই করোনা রোগী বা করোনায় মারা যাওয়া লাশ বহনের জন্য।