লকডাউনে পথে পথে বাধার পরও জনগণের অসচেতনতা স্পষ্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৫ এএম, ১৮ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালন ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ক্ষেত্রে জনসচেতনতা তেমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং চলমান সর্বাত্মক লকডাউনেও কোথাও কোথাও জনগণের অসচেতনতা ও উদাসীনতার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গেল বছর টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর বছরের শেষ দিকে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছিল। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সেটা আরও কমে আসে। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে আবারও ভাইরাসটির বিস্তার শুরু হয়। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হঠাৎ করেই কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মহামারি করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের লকডাউন শেষ হয় ১১ এপ্রিল। তবে ১২ ও ১৩ এপ্রিলও সেই লকডাউনের বিধিনিষেধ বলবৎ রাখা হয়। গতকাল ১৪ এপ্রিল থেকে দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক লকডাউন। চলবে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত। একমাত্র পোশাকশিল্প কারখানা ও জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও পরিবহন ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। তবে সর্বাত্মক লকডাউনেও জরুরি পেশায় নিয়োজিত মানুষকে রাস্তায় বের হওয়ার পর নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ‘মুভমেন্ট পাস’ এর যে ব্যবস্থা করেছে সেটিরও তেমন কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না।
আজ শনিবার সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের চতুর্থ দিনে রাজধানীর শনির আখরা, যাত্রাবাড়ী, দৈনিক বাংলা, পল্টন, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি মোড়ে পুলিশি চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি র্যাব এবং ম্যাজিস্টেটের গাড়ি টহল দিচ্ছে। জরুরি কাজে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মটর বাইক, রিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহনে বের হওয়া মানুষদের প্রায় প্রত্যেক সিগনালেই থামানো হচ্ছে এবং ঘর থেকে বের হওয়ার কারণসহ নানা ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেউ যৌক্তিক কারণ দেখাতে পারলে তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, অন্যথায় চালকদের গাড়িতে মামলা এবং গাড়িতে আসা যাত্রীদের জরিমানা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে অনেকে পুলিশের চেকপোস্ট এড়িয়ে বিকল্প অলিগলি দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রেও অনেক সময় ব্যর্থ হয়ে অনেককে ফিরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে।
বাইক চালক অনিকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অধিকাংশ অলিগলির রাস্তা বাস, কাঠ, বস্তা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মূল রাস্তায় পুলিশি চেকপোস্ট এড়িয়ে গলির ভেতর দিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু এখানকার রাস্তাও বন্ধ। তাই ফিরে এলাম। চেকপোস্টে কাদেরকে চেক করা হচ্ছে, জানতে চাইলে দৈনিক বাংলা মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট সৈকত আহমেদ বলেন, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। আমরা প্রতিটি মানুষকে নিরাপদে থাকার জন্য রাস্তায় বের হওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করছি। যারা অকারণে বের হচ্ছেন তাদেরকে জরিমানার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি মোকাবিলায় সরকার সারা দেশে আরও ৮ দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে ১৪ এপ্রিল সকাল ৬টা থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এর আগে গেল ২৯ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনা জারি করা হয়েছিল। তবে ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের শুরু থেকেই ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে কর্ম হারানো হাজারো মানুষ। অনেকেই লকডাউন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এমন ভাবনা থেকে আসবাবপত্র ও পরিবারসহ গ্রামে ফিরেছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের প্রতিটি অঞ্চলের ঘরমুখো এসব মানুষকে ঢাকা ছাড়তে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। কেউ কেউ যানবাহন না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঢাকাতেই রয়ে গেছেন।
এদিকে নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থায় শিল্প কারখানা খোলা রাখার কথা বলা হলেও দৃশ্যত তা হচ্ছে না। ফলে কারখানার শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে, কিংবা ভ্যানে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে শ্রমিকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।