কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলে নানা সংকটে হাঁস-মুরগী’র খামার ঝুঁকিতে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ পিএম, ১০ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২১ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পারিবারিক পর্যায়ে গড়ে উঠা উন্নত জাতের হাঁস, মুরগীর খামার গুলোতে বর্তমানে সুষ্ঠ পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও বাজারে ভেজাল ফিডের কারনে খামারের স্বাভাবিক উন্নয়ন চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং আর্থিক সংকটে পড়ে পাঁচ উপজেলার কয়েক’শ হাস-মুরগী খামার বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
এমনকি চলমান মহামারী করোনার মধ্যেও প্রয়োজনীয় সুষম খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার অভাবসহ বিভিন্ন প্রতিকুলতার অভিযোগ রয়েছে প্রচুর।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলা গুলোর স্থানীয় ভাবে পুষ্টিকর খাদ্য ডিম ও মাংসের যোগান বৃদ্ধির পাশাপাশি নিম্ন আয়ের পরিবারের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জনের লক্ষে সর্বত্র পারিবারিক পর্যায়ে হাঁস-মুরগীর খামার গড়ে উঠেছে।
সরকারী নজরদারী ও বিনা সুদে ঋণ, খামারীদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকা, বিদ্যুৎতের মূলবৃদ্ধিসহ বর্তমান বাজারে মুরগীর দাম উঠানামা করা এবং খাদ্য-ঔষধসহ আনুসাঙ্গিক সকল পন্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে দরিদ্র খামারীরা।
হাটবাজার জুড়ে ভেজাল খাদ্য বিক্রিতো আছেই। এতে এ অঞ্চলের প্রায় শতাধিক খামার বন্ধের ঝুঁকি ও কয়েকশ শ্রমিক বেকার হওয়ায় আশংকা রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেকেই স্বল্পদামে তাদের মুরগী বিক্রি করে পূঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।
আবার কেউ কেউ খাদ্য-ঔষধ বাকী কিনে মুরগী খামার গড়ে তুললেও লোকসানের মুখে পড়ে দেনার দায়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা গুলোতে যত্রতত্র গড়ে উঠা পোল্ট্রি খামারগুলো পরিবেশ, স্বাস্থ্য দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিবন্ধন কিংবা প্রত্যায়ন পত্র ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। সকল মহলই যেন নিরব দর্শক।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর প্রাণী সম্পদ দপ্তরটি সাইন বোর্ড সর্বস্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা সমস্যায় পড়ে নিজেরাই এখন নানা রোগে আক্রান্ত। সু-চিকিৎসক অভাব রয়েছে প্রতিনিয়ত। গ্রামের মানুষগুলো রোগাক্রান্ত হাঁস, মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছে। ওই বিভাগের কর্মকর্তারা সরকারী চাকরীর পাশাপাশি হরেক রকম ফার্মেসী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রাইভেট প্র্যাকটিস নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।
সাধারন জনগণ দপ্তরে এসে হাস-মুরগীর বিভিন্ন রোগের ঔষধ পত্র তো দূরের কথা কর্মকর্তাদের দেখাও পাওয়া যায় না। আবার দপ্তরের কর্মকর্তাদের অনেকেই টাকার বিনিময়ে খামার মালিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে ঔষধ পত্র বিক্রি ও নিজেদের প্রতিষ্ঠান থেকে হাঁস-মুরগীর খাদ্য ক্রয় করতে বাধ্য করছেন বলে দাবী ভুক্তভোগীদের।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্র জানায়, সরকারি ভাবে কোন আর্থিক ঋণ দানের ব্যবস্থা নেই। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে উৎকোচের মাধ্যমে হাঁস-মুরগীর খামার বাবত সামান্য পরিমান ঋণ পাওয়া গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা সামান্য।
বিশেষ করে একটি মুরগীর বাচ্চা ৩০ টাকায় কিনে ৪৫দিন পালন করতে হয়। বিক্রি হওয়ায় পর্যন্ত একেকটি মুরগী গড়ে ১.৫০ কেজি পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। ওজনও প্রায় ১.৫০ কেজি পর্যন্ত বাড়ে। বাচ্চার দাম, খাদ্য, ঔষধ ও প্রতিপালনসহ প্রতি মুরগীর পিছনে ব্যায় হয় ১৪০/১৫০ টাকা যা পরবর্তীতে বাজারে বিক্রি করতে হয় ১২০/১২৫ টাকায়।
অপরদিকে উপজেলাগুলোর হাট-বাজার জুড়ে যত্রযত্র ভাবে ফিড ব্যবসা গড়ে উঠেছে। দেশের নামী-দামী কোম্পানীর ফিড ব্যবসার পাশাপাশি নিম্নমান ও ভেজাল হরেক রকম ব্র্যান্ডের খাদ্য বাজারে বিক্রি হওয়ায় খামার ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।
এছাড়া ঔষধের ব্যবসার আড়ালে রয়েছে হাজারো বির্তক। এছাড়া হাস মুরগির বৈর্জ্য সংরক্ষণে নিয়ন্ত্রন নেই খামার মালিকদের। ফলে এলাকার পরিবেশ দূষণসহ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা পশুসম্পদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তর কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।