সোনারগাঁও রয়েল রিসোর্ট কান্ড মামুনুল হকসহ ৬০০ জনের নামে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৩ এএম, ৮ এপ্রিল,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:০৩ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও রয়েল রিসোর্টে ভাংচুরের অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামিও করা হয়েছে।
আজ বুধবার বিকেলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে তিনটি মামলা হয়। পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। আর স্থানীয় সাংবাদিক বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
সোনারগাঁয়ের ওই রিসোর্ট থেকে তাকে ছাড়িয়ে ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি মসজিদে নিয়ে যান হেফাজত নেতাকর্মীরা। এর আগে বিকেলে রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হককে স্থানীয় কয়েকজন অবরুদ্ধ করে রাখেন। সেদিন এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে বলতে শোনা যায়, মামুনুল এক নারীসহ আটক হয়েছেন। যদিও ওই নারীকে নিজের স্ত্রী বলে দাবি করেছেন তিনি। এ সময় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনও সেখানে উপস্থিত হন। এ ঘটনা ফেসবুকে লাইভ করেন কয়েকজন ব্যক্তি। ওই লাইভ দেখে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর স্থানীয় লোকজন ও মাদরাসার শত শত ছাত্র ওই রিসোর্ট এ গিয়ে মামুনুল হককে নিয়ে আসেন। বের হয়ে এসে মামুনুল হক জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, কিছু বাইরের লোক খারাপ আচরণ করেছে। আমি আমার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। আপনারা শান্ত থাকুন।
সূত্র মতে, ঘটনার দিন দুপুরের পর মামুনুল হক তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নাম্বার রুমে উঠেন। খবর পেয়ে সোনারগাঁও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সোহাগ রনির নেতৃত্বে একটি গ্রুপ রিসোর্টে যায়। এবং সরাসরি ৫০১ নাম্বার রুমে ঢুকে। ভিডিওতে দেখা যায় মামুনুল হককে তারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। এবং অশ্লীলভাষায় গালমন্দ করে তার সাথে থাকা নারীর পরিচয় জানতে চায়। এ সময় মামুনুল হক তাদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে রিসোর্টে আসেন। স্ত্রীর নাম আমেনা তৈয়বা। শরিয়ত অনুযায়ী তিনি দুই বছর আগে আমেনাকে বিয়ে করেন। এ বিষয়ে তার কাছে প্রমাণও রয়েছে। কিন্তু পরিচয় দেয়ার পরও তারা মামুনুল হককে অবরুন্ধ করে রাখে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ছে শত শত হেফাজতের লোকজন রয়েল রিসোর্টে ছুটে আসে। এবং ঘেরাও করে। এক পযায়ে প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে মামুনুল হক ও তার সাথে থাকা নারীকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। হেফাজতের লোকজন ভ্যাপক ভাংচুর চালায় রিসোর্টের ভেতর।
রয়েল রিসোর্টে হেফাজতের কর্মীদের ভাংচুরের সময় ভেতরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম মোস্তফা মুন্নাসহ সরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মামুনুল হককে ছিনিয়ে নেয়ার সময় হেফাজতের উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকরা লাঠিসোটা হাতে রিসোর্টে ভাংচুরের পর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এবং মুগড়াপাড়ায় যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু ও ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রনির বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর। এসময় হেফাজত কর্মীরা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সড়কে অবস্থান নেন এবং বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করেন। পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেছিলেন, হেফাজত নেতা মামুনুল হককে আটক কিংবা গ্রেফতার কোনোটিই করা হয়নি। স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ফেলায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক করে আনতে সক্ষম হয়। তবে পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দিয়ে রেখেছে।