নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত সেই আ'লীগ নেতার সাংবাদ সম্মেলন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০৬ পিএম, ২৫ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৩ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চরসাদীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে নারী কেলেঙ্কারিতে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে একই ইউনিয়নের সভাপতির বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলনে চরসাদীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক এ অভিযোগ করেন।
গতকাল বুধবার (২৪ মার্চ) দুপুরে এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর থানারমোড়স্থ গড়াই কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ সময় তিনি লিখিত বক্তব্যে চরসাদীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমি আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সরকার দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী গণসংযোগ করে যাচ্ছি। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার প্রতিপক্ষ বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মানিক বিভিন্নভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে।
গত ২২ শে মার্চ সন্ধ্যা আনুমানিক ৬ টা ৪৫ মিনিটের সময় আমার দলীয় কার্যালয় থেকে ব্যবসায়ীক কাজে নিজ দোকানে যাওয়ার পথে ৫ থেকে ৬ জন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত জোরপূর্বক ধরে নিয়ে একটি ঘরে আটকে রেখে জোরপূর্বক একটি নারীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করেছি বলে মোবাইলে জবানবন্দি নিতে চাইলে আমি মিথ্যা জবানবন্দি দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে এবং আমার শরীর থেকে দুটি গেঞ্জির একটি খুলে নেয় এবং পরে পাশের ঘর থেকে একটি মহিলাকে ধরে এনে আমার সাথে ছবি তোলে ও ভিডিও করে। আমার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রচার করা হয়।
এ সকল ঘটনা সম্পূর্ন মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো বলে দাবী করেন তিনি। যারা এমন মানহানি করেছে এবং যারা মানহানির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মানহানির মামলা করবেন বলেও জানান কুমারখালীর চরসাদীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউল হক (উকিল)।
এ সংবাদ সম্মেলনে কুমারখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল হাসান বাকি, বিশিষ্ট সমাজ সেবক আবুল কালাম আজাদ টিক্কা প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের ২২ তারিখে সোমবার উপজেলার চরসাদীপুর ইউনিয়নের একটি বাড়িতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর হককে এক নারীর সাথে আটক করা হয় বলে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া একটি ভিডিও ভাইরাল হয়।
তবে এলাকাবাসী ও ঘটনা সুত্রে জানা যায়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান উকিলের গ্রামের বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গোবিন্দপুর এলাকার বিপুলের স্ত্রী ও এক সন্তানের জননী (৩০) এর সাথে দীর্ঘদিন ধরে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।
প্রায়ই সে লোকচক্ষুর আড়ালে গভীর রাতে লাবনীর বাড়িতে যাওয়া আসা করত এবং একান্তে সময় কাটাতো। সে প্রায় দুই বছর যাবত ওই নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছে বলেও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে অন্যরা তাকে জিজ্ঞাসা করার সাহস পেতোনা। এদিকে বিষয়টি এলাকার লোকজনের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে এলাকার লোকজন তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা চালিয়ে আসছিলো। অবশেষে সোমবার ২২ মার্চ দিবাগত রাত ১২ টার দিকে আতাউর রহমান উকিল ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে যৌন কর্মে লিপ্ত থাকা অবস্থায় এলাকাবাসী হাতেনাতে তাদেরকে ধরে ফেলে। এ সময় গনপিটুনি দিয়ে তাকে আটকে রাখেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
এ ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে এলাকার লোকজন আতাউর রহমানকে আটক করে তাকে উত্তম মাধ্যম দেওয়া ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার মন্তব্য প্রকাশ করছেন।
এব্যাপারে চরসাদীপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার মতো একজন আওয়ামী লীগের নেতার পক্ষে এমন কাজ করা উচিত হয় নাই। আমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে তার বহিষ্কার দাবি করছি এবং একই সাথে এই ঘটনার উপযুক্ত শাস্তিও দাবি করেন তিনি।
তবে সাংবাদ সম্মেলনে আতাউল তার বিরুদ্ধে ফাঁসানোর অভিযোগ করেন কিন্তু সাংবাদিকদের কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি। মুঠোফোনে ওই এলাকার বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, সাংবাদিক সম্মেলনের বিষয় তাদের আগে জানানো হয়নি এবং মাত্র অল্প ক'জন সাংবাদিককে ডেকে তার নিজ অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিক সন্মেলনের পরে তারা জেনেছেন।