স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে মানিকগঞ্জে দুই ইউএনওর চাঁদাবাজি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৯ এএম, ২৫ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৫ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস ২৬ মার্চ উদযাপন উপলক্ষে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।
স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বর্তমান সরকার দেশব্যাপী নানা রকম কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সারাদেশে প্রত্যেক জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চলছে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর প্রামাণ্য চিত্র, বঙ্গবন্ধুর উপর শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই লাল সবুজের বাংলাদেশে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের নামে বিভিন্ন হাট-বাজারের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে চলছে দৌলতপুর ও হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চাঁদাবাজির মহোৎসব।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরুল হাসান উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রত্যেকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে এনে মিটিং করে প্রত্যেক বাজার থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দাবি করেছে। ইউএনওর নির্দেশ মোতাবেক প্রত্যেকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় মাতব্বররা বাজারের চায়ের দোকান, পানের দোকান, সেলুন, মুদি ব্যবসায়ী, তৈরি পোশাকের দোকান, ফার্মেসি, জুয়েলারি দোকান, খাবার হোটেল, স’মিল ও এনজিওসহ সকল প্রকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছে। এসব চাঁদা সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ফান্ডে জমা দিচ্ছে তারা। যে সমস্ত দোকানদার বা ব্যবসায়ী চাঁদা দিতে রাজি হয়নি তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
অপরদিকে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম উপজেলার ৩টি অবৈধ ইটভাটা থেকে মহান স্বাধীনতা দিবস পালনের নামে প্রতিটি ইটভাটা থেকে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। গত বছর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ওই ইট ভাটাগুলো থেকেও তিনি চাঁদা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দৌলতপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও চকমিরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান হবি বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে স্বাধীনতা দিবস পালনের কথা বলে চাঁদা তুলছেন। তিনি নিজেকে দেশের নিষিদ্ধ সংগঠন হেজবুত তাওহীদের মুখপাত্র বজ্রশক্তি পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে জানান, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে ইউএনও’র নির্দেশে বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে চাঁদা তুলছি। এই চাঁদার টাকা দিয়েই ইউএনও স্যারের সাথে সমন্বয় করে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হবে। এছাড়া উপজেলার কয়েকটি বাজার কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ইউএনওর নির্দেশে হাট-বাজারের বিভিন্ন দোকান থেকে চাঁদা তোলার বিষয়ে সহজ স্বীকারোক্তি দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক জানান, ইউএনও স্যার স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল। আমি নানা দেনদরবার করে ৬ হাজার টাকা দিয়েছি। এ নিয়ে ইউএনও স্যারের সাথে আমার অনেক কথা কাটাকাটি হয়েছে।
দৌলতপুর উপজেলা বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে আমরা নিজেরাই বাজার থেকে টাকা তুলে ইউএনও স্যারের কাছে জমা দিব। একটু আমোদ ফুর্তি করার জন্য বাজার থেকে এসব টাকা তুলছি। স্থানীয় সাংবাদিক শাহ আলমও বিষয়টা জানেন।
দৌলতপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ. বি খান বাবু বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে যে টাকা তোলা হচ্ছে এ বিষয় আমি তেমন অবগত নই।
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস বা অন্য কোনো দিবস উপলক্ষে আমি কারো কাছ থেকে কোন চাঁদা বা টাকা চাইনি। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে কেউ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কিছু দিতে চাইলে সেটা নেওয়া হয়।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরুল হাসান বলেন, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কারো কাছে কোন চাঁদা চাওয়া হয়নি। সরকার কর্তৃক বাজেট কম হওয়ায় বিভিন্ন হাট-বাজার কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, বিত্তশালী ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে রেজুলেশন করে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ইউএনওদের চাঁদা তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, চাঁদা তোলার বিষয়ে আমি কোন অভিযোগ পাইনি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।