এরা বরাক নদীকে খালে রুপান্তরের এ কেমন প্রকল্প?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৯ পিএম, ২১ মার্চ,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৯ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় এরা বরাক নদীর ভেতরে চলছে ‘খাল পুনঃখনন প্রকল্প’। সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ের এমন প্রকল্পে বিস্মিত এলাকাবাসী। নদীকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রকল্প বাস্তবায়নে এলজিএস কমিটি নিয়েও রয়েছে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জের আউশকান্দি ও মৌলভীবাজার সদরের খলিলপুরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে এরা বরাক নদী। শুকনো মৌসুমে শ্রীহীন থাকলেও বর্ষায় ফিরে আসে পূর্ণ যৌবন। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ৯৬ মিটার দীর্ঘ সেতু। অথচ, সেই নদীকেই খাল দেখিয়ে ১০০ ফুট প্রস্থে প্রায় ৬ কিলোমিটার পুনঃখনন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ‘ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প’ (জাইকা-২)। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে এলজিএস কমিটি এরা বরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। গত ২২ ফেব্রুয়ারী ৩১টি চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দল বা এলজিএসকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। স্থানীয়দের অভিযোগ, অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্বার্থসিদ্ধির জন্য এমন কাজ করছে একটি কুচক্রী মহল। যে কোনও মূল্যে নদীকে খালে পরিণত করা থেকে রক্ষা করতে চান তারা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নদীর তীরবর্তী জনতার মাঝে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজের আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে এলজিএস কমিটি তৈরি করে ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ভুয়া নাম দিয়ে একটি নদীকে খালে রূপান্তরিত করার প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা সত্যিই ন্যাক্কারজনক। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য পুরো নদীর এমন ক্ষতি মেনে নেয়া যায়না। এটা রীতিমত নদীর প্রতি জুলুম ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে এরা বরাক খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কাজী সাহেদ বিন জাফর বলেন, ‘সরকার প্রকল্পটি খাল হিসেবে দিয়েছে। আমরা শুধু সরকারী আদেশ বাস্তবায়ন করছি। আউশকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান হারুন বলেন, নদীর প্রশস্ততা বেশি থাকায় পুরো অংশ প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব ছিলনা। তাই প্রকল্পের আওতায় আনতেই এটিকে খাল উল্লেখ করা হয়েছে। নদীর মাঝখানে ১০০ ফুট খননের পর নির্দেশনা অনুযায়ী পাশেই রাখা হবে উত্তোলিত মাটি। কমিটিতে স্বজনদের রাখার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘পুরো ইউনিয়নেই আমার আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। আমরা সবাই একে অপরের আত্মীয়’।
সাড়ে ৩ বছর যাচাই-বাছাই করেও নদীকে কেন খাল দেখিয়ে প্রকল্প নেয়া হল এমন প্রশ্নের জবাবে হবিগঞ্জ ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী মাজহার ইবনে মোবারক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। প্রধান কার্যালয় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবে’। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বাছিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি জনবান্ধব না হলে বা ডিজাইনে ভুল থাকলে সেটি সংশোধনে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।