শাল্লায় সংখ্যালঘু গ্রামে হামলার ঘটনায় গ্রেফতার ২২ আসামী কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩৬ পিএম, ২০ মার্চ,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৪ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লায় সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করে লুটপাটের ঘটনার উস্কানীদাতা প্রধান আসামী যুবলীগ নেতা স্বাধীন মেম্বারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
গতকাল শুক্রবার (১৯শে মার্চ) রাত ৩টায় মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরের একটি স্কুলের পাশ থেকে অভিযান চালিয়ে শফিকুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বার (৪৮) কে গ্রেফতার করা হয়।
সে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের নাচনী গ্রামের বাসিন্দা ও ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি। এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার খালেদ উজ-জামান সাংবাদিকদের জানান- প্রযুক্তির সহায়তায় শহিদুল ইসলাম ওরফে স্বাধীন মেম্বারের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তাকে সুনামগঞ্জ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে রাত ৮টায় ২২ আসামী কারাঘারে পাঠিয়েছে আদালত। তাদেরকে গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার বিকাল পর্যন্ত দিরাই ও শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এব্যাপারে সুনামগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সেলিম নেওয়াজ সাংবাদিকদের জানান- গ্রেফতারকৃত ২২জনকে পুলিশ বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ইসরাত জাহানের আদালতে ২২জনকে হাজির করা হলে সংখ্যালঘুদের নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ও মন্দির ভাংচুর করে লুটপাটের ঘটনার জন্য তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাঘারে পাঠানো নির্দেশ দেন বিচারক।
থানা সূত্রে জানা যায়- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে কুটক্তি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ঝুমন দাস (৩০)।
এঘটনার প্রেক্ষিতে মাওলানা মামুনুল হকের অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ঝুমন দাসকে খোঁজে বের করে আটক করে থানায় সোপর্দ করে। তারপরও ক্ষান্ত হয়নি তারা।
পরদিন বুধবার সকালে শাল্লা ও দিরাই উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র ও লাটি-সোটা নিয়ে সংখ্যালঘুদের গ্রাম নোয়াগাঁও গিয়ে ৮৭টি বাড়িঘর ও ৬টি মন্দির ভাংচুর করে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণলংকারসহ বিভিন্ন মালামাল লুটপাট করে।
এঘটনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার রাতে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল বাদী হয়ে ১টি মামলা ও শাল্লা থানার এসআই আব্দুল করিম বাদী হয়ে ১টি মামলা দায়ের করেন।
আর দায়েরকৃত পৃথক ২টি মামলায় আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের চন্দ্রপুর, নাচনী ও শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের ১৬০০জনকে।
তাদের মধ্যে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার উস্কানিদাতা হিসেবে মামলার প্রধান আসামী করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নাচনী গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা স্বাধীন মিয়াকে।
দায়েরকৃত ২টি মামলায় ৭০-৮০জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে আর বাকি আসামীদেরকে অজ্ঞাত হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বর্তমানে থমথম অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে শাল্লা থানার ওসি মোঃ নাজমুল হক সাংবাদিকদের বলেন- গ্রেফতারকৃত ২২জনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। দায়েরকৃত মামলার অন্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।