চুয়াডাঙ্গায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে হামলার শিকার ইউএনও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৩ এএম, ১৭ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৭ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কাটাপোল গ্রামে ট্রাক্টরচাপায় বাইসাইকেল আরোহী নিহতের ঘটনায় পরিদর্শনে গেলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর হামলার শিকার হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম মুনিম লিংকন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। বর্তমানে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে।
এলাকাবাসী জানান, কাটাপোল গ্রামের মাঠ থেকে মাটি উত্তোলন করে দেদারছে ইটভাটায় বিক্রি করছে একটি মহল। ফলে প্রতিদিনই মাটিবহনকারী অর্ধশত ট্রাক্টর ওই রাস্তা দিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করে। এ নিয়ে এলাকাবাসী চরম বিক্ষুব্ধ ছিলেন।
এর প্রতিকার চেয়ে গ্রামবাসী প্রশাসনের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মুনিম লিংকন চারদিন আগে দুজন ট্রাক্টর চালককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
এ অবস্থার মধ্যে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার শংকরহুদা-বাথানগাছি গ্রামের মঈদুল ইসলাম (৩৪) তার ৭ বছরের শিশু সন্তান রাসেলকে নিয়ে বাইসাইকেলযোগে শ্বশুরবাড়ি জীবননগর উপজেলার নতুন চাকলা গ্রামে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কাটাপোল গ্রামে দক্ষিণ পাড়ায় তারা পৌঁছালে ট্রাক্টরের ধাক্কায় পিতা-পুত্র আহত হয়। হাসপাতালে নেয়ার আগেই মঈদুল ইসলামের মৃত্যু হয়। ছেলে রাসেলের হাত-পা ভেঙে যায়। তাকে উদ্ধার করে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী সড়ক অবরোধ করে রাখে।
আহত ইউএনও এসএম মুনিম লিংকন জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে তিন শতাধিক লোক তাকে ঘিরে ধরেন। সেখান থেকে তিনি চলে যেতে চাইলে বিক্ষুব্ধ লোকজন ইউএনওকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় ইটের আঘাতে তার মাথা থেকে রক্ত বের হয়। অবস্থার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে তিনি পার্শ্ববর্তী জমির উদ্দিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন।
তিনি আরও জানান, বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই বাড়িতেও হামলা চালায়। খবর পেয়ে জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করেন এবং ইউএনওকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নেন।
জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. হাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি তিন শতাধিক মানুষ ইউএনওকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন খুবই উত্তেজিত ছিল। আমি কৌশলে ইউএনওকে উদ্ধার করে তার বাসভবনে নিয়ে যাই এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।
জীবননগর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ইউএনও ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর ৫ মিনিট আগে আমি ওখানে পৌঁছাই। আমি বিক্ষুব্ধ লোকজনকে শান্ত করার চেষ্টা করি। এ সময় ইউএনও গাড়ি থেকে নামার পরই উত্তেজিত লোকজন তার ওপর হামলা চালায়। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিনা আখতার সুমি জানান, ইউএনওর মাথায় ইটের আঘাত লেগেছে। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।