তালতলীতে স্কুল ছাত্রকে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় নির্যাতন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০২ এএম, ১৬ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:১০ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
বরগুনার তালতলিতে গাছের সাথে বেঁধে নাজমুল নামের এক ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুল ছাত্রকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত ছাত্রকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যায় বরগুনার তালতলী উপজেলার উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
জানাগেছে উপজেলার কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ নলবুনিয়া গ্রামের ছালাম তালুকদার ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করেন এবং স্ত্রী নাজমা বেগম জর্ডান থাকেন। ওই দম্পতির একমাত্র ছেলে নাজমুল উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামের নানা নুরু মাতুব্বরের বাড়ীতে থেকে আলীর বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নামজুল নানা বাড়ীর পাশে কবির মিয়ার জাল সেলাই করতেছিল। এ সময় একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র প্রতিবেশী তামিম এসে নাজমুলকে পিছন দিকে থেকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। নাজমুল তা প্রতিরোধ করে। এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে মারামারি হয়। এ ঘটনার ঘন্টাখানেক পরে তামিমের দাদা সুলতান মাতুব্বর এসে ওই বাড়ী থেকে নাজমুলকে ধরে নিয়ে যায়। পরে রশি দিয়ে নিম গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে যখম করে।
খবর পেয়ে নাজমুলের মামি শাহিনুর ঘটনাস্থলে গিয়ে নাজমুলকে উদ্ধারের চেষ্টা করে। এ সময় সুলতান মাতুব্বর তাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ডান হাতের একটি আঙ্গুল কেটে দেয়। সুলতার মাতুব্বরের মারধরে নামজুলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত যখম হয়। পরে স্বজনরা নামজুল ও শাহানা উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার রাতে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় স্কুল ছাত্র নাজমুলের ফুফু রোশনা আক্তার বাদী হয়ে সুলতানকে প্রধান অভিযুক্ত করে পাঁচ জনের নামে তালতলী থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
আহত নাজমুল কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমি কবির মিয়ার বল্লা জাল সেলাই করতে ছিলাম। এমন মুহুর্তে তামিম পিছন থেকে এসে আমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকে। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। পরে আমি তাকে প্রতিহত করে পাল্টা জবাব দেই। এ ঘটনার ঘন্টাখানেক পরে তামিমের দাদা সুলতান মাতুব্বর এসে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে একটি গাছের সাথে বেধে লাঠি দিয়ে বেধরক মারধর করে। আমাকে রক্ষায় আমার মামি শাহিনুর বেগম এগিয়ে গেলে তিনি তাকেও কুপিয়ে আহত করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নাজমুলের মামি শাহিনুর বলেন, নাজমুলকে রক্ষায় আমি এগিয়ে গেলে আমাকে একটি ধারালো অ¯্র দিয়ে কুপিয়ে আমার ডান হাতের আঙ্গুল কেটে দিয়েছে।
আহত নাজমুলের বাবা মোঃ ছালাম তালুকদার বলেন, আমার স্ত্রী জর্দান থাকে এবং আমি ঢাকায় দিন মজুরের কাজ করি। এ সুবাদে আমার ছেলেকে নানা নুরু মাতুব্বরের বাড়ীতে রেখে এসেছি। আমার ছেলেকে সুলতার মাতুব্বর অহেতুক গাছের সাথে বেঁধে মারধর করেছে । আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে সুলতান মাতুব্বর শিশু নাজমুলকে মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার নাতি তামিমের সাথে নাজমুলের মারামারি হয়েছে। তা ছাড়িয়ে দিয়েছি মাত্র। তবে নাজমুলের শরীরের আঘাতের চিহ্ন কিসের এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শিশু নাজমুলের বাম পায়ের রান ও পেছনে রক্তাক্ত জখমসহ সারা শরীরের এবং শাহিনুরের ডান হাতের আঙ্গুল কাটার চিহৃ রয়েছে। নাজমুল ও শাহিনুরকে যথাযথ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে তালতলী থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান মিয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।