কুষ্টিয়া প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান দম্পত্তির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৭ পিএম, ৯ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৭ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চলছে মার্কেট নির্মাণের মহোৎসব। দোকান ঘরের পজিশন বিক্রির মাধ্যমে দখল হয়ে যাচ্ছে জমি। ছোট হয়ে আসছে দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়া হাইস্কুল।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গর্ভনিং বডি গঠন স্থগিত থাকলেও থেমে নেই মার্কেট নির্মান। ৫ শতাধিক দোকান ঘরের পজিশন বিক্রি করেও অভাব মিটছেনা স্কুল কর্তৃপক্ষের। পজিশন কিনে মানুষ ফ্লাট বাড়ী থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে খেলার মাঠ। আবারো নতুন করে শুরু হয়েছে নির্মাণ কাজ।
স্কুলটির পশ্চিম পাশে ৮ হাজার স্কয়ার ফিট মার্কেটের নীচ তলার ছাদ ঢালাই শেষ করে দোতলার কাজে হাত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পজিশন বিক্রিও শেষ। এখানে ১০বাই ১৫ ফুটের দোকান প্রতি দাম ধরেছে নূন্যতম ১০ লাখ টাকা। আবার দক্ষিণ দিকের পুকুর পাড়ে প্রায় ২হাজার স্কয়ার ফুট মার্কেটের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করেছে। এখানে নীচ তলায় প্রতিটি দোকানের পজিশন বিক্রি হয়েছে ১০/১২ লাখ টাকায়।
এই বিদ্যালয়ে নতুন নতুন স্থানে মার্কেট নির্মাণ ও ছাদ বিক্রির খবর কুষ্টিয়ার মানুষের মুখে মুখে। কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে খলিলুর রহমান যোগদানের পর থেকেই এ কর্মযঞ্জ শুরু হয়েছে। তিনি অল্প দিনেই প্রিন্টিং প্রেস, গাড়ী, বাড়ী, ফ্লাটসহ প্রচুর সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। স্কুল পরিচালনা কমিটি, রাজনীতিবিদসহ প্রভাবশালীদের ম্যনেজ করেই এসব কাজ চালিয়ে আসছেন তিনি।
হঠাৎ কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান দম্পত্তির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা" টক অব দ্যা টাউন"এ পরিনত হয়েছে। ৮মার্চ সোমবার কুষ্টিয়া বিশেষ জজ আদালতে খলিলুর রহমানের স্ত্রী বিলকিস রহমানের বিরুদ্ধে ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৫শত ৩৪ টাকার জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তি অর্জন ও দখলে রাখার অপরাধে মামলা হয়েছে।
যার নম্বর ৭, তারিখ ৮/৩/২০২১খ্রীঃ। একই অপরাধে খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে ৫২ লাখ ৫৫ হাজার ১শত ৬৯ টাকার মামলা হয়েছে। যার নম্বর ৮, তারিখ ৮/৩/২০২১খ্রীঃ। মামলা দুটি দূর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইন ২০০৪ সালের ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য ১৮৬১ সালে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় কুষ্টিয়া ইউনাইটেড হাই স্কুল। প্রায় ৮ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি এক সময় শহরের একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এদিকে কুষ্টিয়া শহরের প্রাণকেন্দ্রের ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতকোটি টাকার সম্পদ প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রভাবশলী মহলের ইন্ধনে লুটপাট ও আত্মসাতের ঘটনায় এতোদিন মুখ খুলতে পারেনি শহরবাসী। দুদকের এই মামলা দায়ের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শহরবাসী আনন্দে মিষ্টিমুখ করার ঘটনাও ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডা: এর পরিচালক এসএম কাদরী শাকিল বলেন, অনেক দেরিতে হলেও দুদকের এই পদক্ষেপে আমি খুশি, তবে দুদক যে কেবল কোটি টাকার সম্পত্তির হিসেব দিচ্ছেন, সেই পরিমানটার প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠা দরকার। আমার মনে হয় এই পরিমানটা আরও অধিক হওয়ার কথা। যাই হোক সঠিক তদন্ত ও দৃষ্টান্ত মূলক বিচারসহ বিদ্যালয়টিকে রক্ষার দাবি করছি।
কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চিকিৎসক নেতা ডা: আমিনুল হক রতন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, এতোদিন ধরে আমাদের চোখের সামনে তিল তিল করে বিদ্যালয়টির অস্তিত্ব বিলিন হয়ে যাচ্ছিল; আমরা অনেকেই দেখেছি, কিন্তু কার্যত: কেউই মুখ খুলে কিছু বলতে পারিনি।
এই প্রতিষ্ঠানটি এখন কিছু স্বার্থন্বেষী প্রভাবশালী মহলের অর্থ আয়ের ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। দুদক এতোদিন পর মামলাটি করলেও আমি বলতে চাই, এই প্রতিষ্ঠানটিকে লুটপাট করে এর অস্তিত্বকে যারা বিপন্নের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে তাদের সকলের মুখোশ উন্মোচিত করার দাবিসহ ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি তার যথার্থ প্রান ফিরে পায় সেই দাবি করছি। আমরা শহরবাসী জানতে চাই প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠানটির কি পরিমান সম্পদ লুটপাট হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান।
দুদকের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চেয়ে কুষ্টিয়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: একে এম মুনির বলেন, দুদকের মামলার বিষয়ে আমি শুনেছি। এটা প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়ে সাথে সম্পৃক্ত। স্কুলের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই, তাছাড়া দুদক যে মামলা করেছে তার মেরিট দুর্বল। এ মামলায় শেষ পর্যন্ত কিছু হবে না।