গৌরীপুরে আ’লীগের দু’গ্রুপের দ্বন্দ্বে হরতাল, জীবনের নিরাপত্তা চান এমপি নাজিম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৫ এএম, ৯ মার্চ,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৩ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আধিপত্য দ্বন্দ্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আধা বেলা হরতাল পালন করেছেন মেয়র সমর্থকরা।
আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এ আধাবেলা হরতাল চলে।
জানা যায়, হরতালের কারণে কাঁচাবাজার, মাছবাজার, ওষুধ ও খাবারের দোকানও বন্ধ ছিল। পৌর বাসস্ট্যান্ড, অটোস্ট্যান্ড থেকে কোনো যানবাহন আন্তঃসড়কে চলাচল করেনি। হরতালের কারণে পুরো শহর ছিল ফাঁকা। এ সময় পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যবসায়ীদের তথ্যে জানা যায়, গৌরীপুর পৌরসভার নবনির্বাচিত হ্যাট্টিক বিজয়ী পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে রবিবার দুপুরে গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায় এমপি পুত্র রাজিবের সমর্থকরা। মূলত এ ঘটনার প্রতিবাদে এ হরতাল পালিত হয়। তবে গুলির অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন এমপি পুত্র যুবলীগ নেতা তানজীর আহম্মেদ রাজীব।
সূত্র জানায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের সাথে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদের পুত্র তানজির আহম্মেদ রাজীবের সাথে দ্বন্দ্ব চলছিল। বিগত পৌর নির্বাচনে মেয়র রফিক বিজয়ী হলে এ দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারন করে। ফলে পৌর নির্বাচনের পর এমপি পুত্র রাজীব পৌরসভা এলাকায় যায়নি। গত ৭মার্চের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রাজিব তাঁর সমর্থকদের নিয়ে হোন্ডা বহরে পৌর এলাকার বাসস্ট্যান্ডে পৌছঁলে তাদেরকে রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ করে প্রতিহত করার চেষ্টা চালায় মেয়র গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ সময় দু’পক্ষের মাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতিতি নিয়ন্ত্রন করলে যুবলীগ নেতা রাজীব তার সমর্থকদের নিয়ে শহরে ফিরে আসে। বর্তমানে এ ঘটনায় পৌর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করলেও দু’পক্ষের ভেতরে ভেতরে রণ প্রস্তুতি চলছে বলেও দাবি স্থানীয় আওয়ামীলীগের একাধিক সূত্রের। তাদের ভাষ্যমতে, এ দ্বন্দ্বের জের ধরে যে কোন সময় বড় ধরনের সংর্ঘষ পারে।
ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সদস্য এমপি পুত্র তানজির আহম্মেদ রাজীব জানান, ৭ মার্চের অনুষ্ঠান ও শাহগঞ্জের একটি খেলার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য দুপুরে গৌরীপুর রেললাইন সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌছলে মেয়র রফিকের উপস্থিতিতে তাঁর সমর্থকরা আমার হোন্ডা বহরে রেললাইনের পাথর নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। এ সময় বিষয়টি বুঝতে পেরে আমার কর্মীরা প্রতিহতের চেষ্টা করলে পাথরের আঘাতে কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। খবর পেয়ে ওসি ঘটনাস্থলে আসলে পুলিশের উপস্থিতিতেই মেয়র সমর্থকরা দ্বিতীয়বার হামলার চেষ্টা চালায়। রাজিব দাবি করেন, বিগত নির্বাচনে আমি নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলাম। রফিক আমাকের টাকার প্রস্তাব দিয়েও তাঁর পক্ষে নিতে পারেনি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি আমার উপর হামলা চালিয়েছেন। এর আগেও তিনি আমার পিতা স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহম্মেদকে ফোনে হুমকি দিয়েছিলেন।
তবে পৌর মেয়র সৈযদ রফিক জানান, ৭ মার্চের অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পথে পৌরসভার সামনে এমপি পুত্র রাজীব স্থানীয় সন্ত্রাসী ও ডাকাতা দলের সদস্যদের নিয়ে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে আমার উপর হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে গুলি করে। তবে গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হওয়ায় আমার কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি দাবি করেন, এ সময় রাজীবের সন্ত্রাসীদের হামলায় দেলোয়ার ও আলআমীন নামের আমার দুই সমর্থক আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের সরকার দলীয় এমপি মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কায় রয়েছেন’ দাবি করে ৭ মার্চ রাতে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিষয়টি তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন, বলেও জানান সাংবাদিকদের।
এমপি নাজিম উদ্দিনের অভিযোগ, রবিবার দুপুর ১২টার দিকে গৌরীপুরে ৭ মার্চের সরকারি ও দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ‘পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। এ সময় তার সাথে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের মারধর করে আহত করে হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা পরিষদে নিয়ে যায় বলে তার ভাষ্য। মেয়র রফিক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই গৌরীপুরে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন’ বলেও অভিযোগ করেন এই সংসদ সদস্য। গত ৩০ জানুয়ারি মোবাইল ফোনে ‘প্রাণনাশের হুমকি’ পাওয়ার পর কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট হত্যা মামলা থাকার পরও তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কোন স্বার্থের কারণে অভিযোগ দেওয়ার পরও মেয়র রফিক এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. হেলাল উদ্দিন, তথ্য ও গবষণা সম্পাদক জসীম উদ্দিন, অচিন্তপুর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম, পরাজিত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম হবিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।