কুষ্টিয়ার পোড়াদহে সম্পত্তির জন্যই মাকে নির্মমভাবে হত্যা করে কুলাঙ্গার সন্তান !
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৪ এএম, ২৫ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
সম্পত্তির জন্যই নিজের গর্ভধারিণী মাকে দিন দুপুরে হত্যা করে বস্তায় ভরে পুকুরের পানিতে চাপা দিয়ে ডুবিয়ে রাখে এক পাষন্ড সন্তান। মা অন্যের হাত ধরে চলে গেছে এবং অপহরণ নাটকও করে সন্তান। কিন্তু মাকে হত্যা করে বাঁচতে পারেনি। দীর্ঘ এক মাস ৪দিন পর পুলিশ উদ্ধার করেছে হতভাগিনী ওই মায়ের লাশ। আটক হয়েছে ওই পাষন্ড কুলাঙ্গার সন্তান মুন্না বাবু। কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা পোড়াদহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কাটদহ গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত।
প্রেস বিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ দক্ষিণ কাটদহ গ্রামের ফজলের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৫৫)। মমতাজ বেগমের এক ছেলে ও ৩ মেয়ে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একমাত্র ছেলে মুন্নার সঙ্গে বসবাস করতেন। মা যাতে মেয়েদের সম্পত্তির ভাগ দিতে না পারেন সেই জন্য বন্ধু রাব্বি ও চাচা আব্দুল কাদেরকে নিয়ে মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। গত ২০ জানুয়ারি দিন বিধবা মা যখন টিউবয়েলের উপর মাছ কুটতেছিলো। সে সময় পেছন দিক থেকে সন্তান মুন্না একটি কাপড় নিয়ে মায়ের চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলেন। তার চাচা আব্দুল কাদের একটি রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দেন। অন্য বন্ধু হাত পা চেপে ধরে। এভাবে হত্যা করার পর মমতাজ বেগমকে হাত ও পা রড এবং রশি দিয়ে বেঁধে বস্তা ভর্তি করে। এরপর ওই লাশ দিনের বেলায় খাঁটের নিচে লুকিয়ে রাখেন।
গভীর রাতে ওই লাশ নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী পুকুরে অল্প পানির মধ্যে মাটি খুড়ে পূতে রাখেন। বাড়ির টালি ও রড দিয়ে চাপা দিয়ে রাখেন।
পরে ২১ জানুয়ারি ছেলে মুন্না মিরপুর থানায় তার মাকে কে বা কারা অপহরণ করেছে এই মর্মে জিডি করেন।
কেবল তাই নয় এরপর মুন্না তার বন্ধু রাব্বিকে অপহরণকারী সাজিয়ে তার (মুন্না) দুলাভাইয়ের কাছে ফোন করিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন।
জিডি ও ফোন কলের সূত্র ধরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেনের নেতৃত্বে তদন্তে নামে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে মঙ্গলবার মমতাজ বেগমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ছেলে মুন্না, তার বন্ধু রাব্বি ও চাচা আব্দুল কাদেরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের কাছে বিস্তারিত তথ্য দেন তারা।
অপরদিকে পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে তার আত্মীয় স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। বুধবার দুপুরে পোড়াদহ দক্ষিণ কাটদহ মসজিদ চত্বরে তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহতের বোন জানান, মমতাজের সন্তান মুন্নাই তাকে খুন করেছে। তারা এর ন্যায্য বিচার চান।
নিহতের মেয়ে জানান, একটি দোকান বিক্রি করে সে টাকা বোনসহ সকলকে মা ভাগ করে দিয়েছে। অন্য দোকান পাট আছে সেগুলো বিক্রি করে সে টাকা চেয়েছিলো। মা দোকান বিক্রি করে না দেওয়ায় মাকে খুন করেছে মুন্না।
অপরদিকে গ্রামের লোকজন জানান, মুন্না জুয়া খেলা করতো। জুয়া খেলতে গিয়েই বাবার লাখ লাখ টাকার সম্পদ নষ্ট করেছে মুন্না। তার মা তাকে ভালো করার অনেক চেষ্টা করেন। ছেলেকে দর্মীয় লাইনে আনার জন্য এলাকার এক মহিলা বক্তার মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ের সাথে বিয়েও দেন। কিন্তু ভালো করতে পারেননি। বিয়ের পরও নিজ স্ত্রীর উপরও অনেক নির্যাতন করেছে মুন্না। তাই গত কয়েক মাস মুন্নার স্ত্রীও বাড়ি ছেড়ে শ^শুর বাড়িতে চলে যান। ফাঁকা বাড়ি পেয়েই মুন্না তার মাকে হত্যা করেছে।
এ ঘটনা পুরো এলাকার ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। গর্ভধারিনী মাকে হত্যার বিচার যেন হয় মৃত্যুদন্ড সে দাবী করেছে এলাকাবাসী। সেই সাথে দোষীদেরও শাস্তির দাবী করেন।
এ বিষয়ে হক্কানী দরবারের পরিচালক সাংবাদিক এম খালিদ হোসাইন সিপাহী বলেন, সন্তান কর্তৃক মাকে হত্যা এ হত্যাকান্ড পৈশাচিক, চরম বর্বরতার পরিচয় বহন করছে। যা জাহেলিয়াতের যুগকেও হার মানাবে। আমরা এই হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। দোষী কুলাঙ্গার সন্তান মুন্নার ফাঁসি চায়। সেই সাথে এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য আসামীদেরও শাস্তি চায়।