ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে গৃহবধূকে ‘কুপিয়ে হত্যা’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৩ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:২৯ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ দল নাজমা আক্তার (৫৫) নামে এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসময় আরও চারজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়নের ভাওরখোলা গ্রামে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসী ও তার নিকটাত্মীয়ের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে।
আজ শনিবার দুপুরে মেঘনা থানায় হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলাকারী ও হামলার শিকার দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসীকে প্রধান আসামি করে এজাহারভুক্ত ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম। এ ছাড়া বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছে।
জানা যায়, আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহত নাজমা আক্তার একই গ্রামের আব্দুস সালামের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ভাওরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আব্বাসীর সঙ্গে গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া নিয়ে একই গ্রামের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিরাজুল ইসলামের বিরোধ চলছিল। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন এলাকায় আসতে পারেননি সিরাজ।
গতকাল শুক্রবার তার চাচাতো ভাই দিলবারের মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন। তবে সামনে ইউপি নির্বাচন হওয়ায় সিরাজের বাড়িতে আসার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ফারুক আব্বাসী। এ কারণে এদিন সন্ধ্যায় ফারুক আব্বাসীর নেতৃত্বে দেশীয় তৈরি অস্ত্র নিয়ে একদল সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে হামলা চালায়।
এসময় হামলাকারীরা নাজমা আক্তারসহ ঘরে থাকা সবাইকে কুপিয়ে আহত করে। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজমা আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
মেঘনা থানা পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে ফারুক আব্বাসী ও তার নিকটাত্মীয়র বাড়ি থেকে ৮০টি টেঁটা, ১০টি ছেনা, তিনটি চাইনিজ কুড়াল, পাঁচটি ধামা, পাঁচটি ছোড়াসহ বেশকিছু বল্লম উদ্ধার করেছে।
মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মজিদ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে হত্যা ও দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধারে থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।’
কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (হোমনা সার্কেল) মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের দুটি টিম মাঠে কাজ করছে। পুনরায় হামলা ও সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ভাওরখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফারুক আব্বাসীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কোনো বক্তব্য নেওয়া যায়নি।