বড়বগী ইউনিয়নের দু’বারের স্বর্ণপদক পাওয়া ইউপি সদস্য এখন চা বিক্রেতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩৭ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
বরগুনার তালতলী উপজেলার বড়বগী ইউনিয়নের দু’বারের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ স্বপন হাওলাদার (৪৫) এখন চা বিক্রি করে সংসার চালান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১২ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সততার সঙ্গে জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সেসময় দু’বার শ্রেষ্ঠ ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদকে ভূষিত হন স্বপন হাওলাদার। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্বপালন করা সাবেক এই ইউপি সদস্য এখন বসবাস করছেন অন্যের জমিতে।
জীবিকার তাগিদে দীর্ঘদিন রিক্সাও চালিয়েছেন। মহামারী করোনার কারণে রিক্সা চালানো বাদ দিয়ে এখন চা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন।
দুর্নীতির সঙ্গে আপস না করা স্বপন হাওলাদার দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমিতে বসবাস করেছেন। সরকারি জমিতে থাকা তার ঘরটি গত বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃপক্ষ ভেঙ্গে দিয়েছে। এরপর থেকে তিনি তার মাসহ পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে অন্যের জমিতে মাথা গোঁজার চেষ্টা করছেন।
স্থানীয়রা জানায়, এক সময়ের আলোচিত এই ইউপি সদস্য স্বপন মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। বিপদে আপদে তাদের পাশে দাঁড়াতেন। সততার সঙ্গে দায়িত্বপালন করার কারনে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে তাকে শ্রেষ্ঠ ইউপি সদস্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
শত শত মানুষের উপকার করা এই ইউপি সদস্যের পাশে এখন আর কেউ নেই। ইচ্ছা করলে জনপ্রতিনিধি থাকা অবস্থায় এ পদককে পুঁজি করে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করতে পারতেন স্বপন। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে পারতেন সুখে। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজেকে মানুষের জন্য বিলিয়ে দেওয়া এই ইউপি সদস্যের বসবাস এখন অন্যের জমিতে। সামনে বর্ষা মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে স্বপন তার পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন। তিনি পরিবার নিয়ে নিরাপদে কোথায় আশ্রয় নেবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।
ওই এলাকার আবুল কালাম, সফেজ উদ্দিনসহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, ইউপি সদস্য থাকা অবস্থায় সবসময় আমাদের পাশে থাকতেন স্বপন হাওলাদার। কখনও তিনি জনগণের অর্থেও ভাগ বসাননি। নিজেকে সবসময় জনগণের সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন।
তারা আরো জানান, গত বুধবার ইউপি সদস্য স্বপন হাওলারের থাকার ঘরটি প্রশাসন ভেঙ্গে দিয়েছে। এখন স্বপন মেম্বার অন্যের জমিতে থাকেন। তার এ অবস্থা দেখে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তারপরেও তার পাশে দাঁড়ানোর সাধ্য আমাদের কারোর নেই।
অপরদিকে সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদারের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ইউপি সদস্যের দায়িত্বপালন শেষে জীবিকার তাগিদে স্বপন হাওলাদার লোকলজ্জার ভয়ে তালতলী ছেড়ে দীর্ঘদিন রিক্সা চালিয়েছেন ঝালকাঠি ও বরিশাল শহরে। রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি লেখাপড়া করাচ্ছেন ২ পুত্র ও ১ কন্যাকে। তার ২ পুত্র ইতোমধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এছাড়া ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়া একমাত্র মেধাবী কন্যা তালতলীর একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত আছে।
সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে আমি সততার সঙ্গে দায়িত্বপালনের চেষ্টা করেছি। জীবিকা নির্বাহের জন্য লোকলজ্জার ভয়ে দূরে গিয়ে রিকশা চালিয়েছি। এখন চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা চেষ্টা করছি। আমার একমাত্র সম্বল ছিল সরকারি জমিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাসের জন্য একটি ঘর। সেটিও প্রশাসন ভেঙ্গে ফেলেছে। সরকারের কাছে আমি বসবাসের জন্য এক খন্ড জমি ও একটি ঘর চাই। এর বাইরে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।
বিষয়টি নিয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিঃ) মোঃ আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন হাওলাদারের বসবাসের জন্য ঘরের প্রয়োজনীয়তার কথা আমি জেনেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। স্বপন হাওলাদার আমাদের কাছে লিখিত আবেদন করলে অবশ্যই তাকে আমরা একটি সরকারি ঘর দেওয়ার চেষ্টা করবো।