বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা
সাবেক এএসপি জয়ীতা শিল্পী ও স্বামী যুবলীগ নেতা কামরুলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ !
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩১ পিএম, ২০ অক্টোবর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০৪:৩৫ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজধানীর বহুল আলোচিত এক সময়ের RAB-4 এর সাবেক এএসপি জয়িতা শিল্পী ও তার স্বামী মামলাবাজ যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুলের বিরুদ্ধে অপহরণ সহ নানা নির্যাতনের অপরাধে একটি মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ মিরপুর শাহআলী এলাকার ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান বাদি হয়ে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন আদালত জনাব নাজমিন আক্তার এর আদালতে ওই মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে RAB-4 এর সাবেক এএসপি জয়িতা শিল্পী ও তার স্বামী মামলাবাজ যুবলীগ নেতা কামরুজ্জামান কামরুলের সহায়তায় ২০২২ সালের ২৪শে এপ্রিল রাতের আধারে তুলে নিয়ে RAB এর ক্ষমতা বলে বাড়ি দখলের চেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, জালটাকা সহ হরিণের চামড়া উদ্ধার সংক্রান্ত ভূয়া মামলা দেয় মিরপুর পুলিশ বিভাগের শাহআলী থানার তৎকালীন ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ।
ওই ঘটনায় ভোক্তভুগি মাহমুদুল হাসান ও তার পরিবার তার বিরুদ্ধে করা মামলার সঠিক তদন্ত করে আসামীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করেছেন।
তৎকালীন বহুল আলোচিত বাড়ি দখলের চেষ্টা, অস্ত্র, মাদক, জালটাকা সহ হরিণের চামড়া উদ্ধার সংক্রান্ত ভূয়া মামলা প্রদানের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান শাহআলী থানাধীন নবাবেরবাগস্থ ১৪৪ নং বাড়ির ক্রয় সূত্রে বর্তমান মালিক ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান।
জানা যায়, রাজধানীর শাহআলী থানাধীন নবাবেরবাগস্থ ১৪৪ নং বাড়ির ক্রয় সূত্রে বর্তমান মালিক ব্যবসায়ী মাহমুদুল হাসান। ২০০৯ সালে নগদ অর্থ মূল্যে তার বড় ভাই ওসমান গনির কাছ থেকে সাড়ে ৬শতক জমির উপর অবস্থিত এই আটতলা বাড়িটি ক্রয় করেন। বাড়িটি কেনার পর মাহমুদুল হাসান বাড়িটি ৬ তলা থেকে ৮ তলায় উন্নিত করে গার্মেন্টস ভাড়া দিয়ে ও নিজ অফিস হিসাবে ব্যবহার করে আসছিলেন। কিন্তু, ২০২১ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি অভিযোগকারীর বড় ভাই মারা যাওয়ার পর স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতা, ভূমি দস্যুদের পরামর্শে উক্ত জমিসহ বাড়ি দখল নেওয়ার অভিপ্রায়ে প্রখ্যাত ভূমিদস্যু ইউসুফ সাহীদ একটি ভূয়া দলিল প্রস্তুত করে ওই বাড়িটি দখলের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। ওই ভূয়া দলিল এর মাধ্যমে ইউসুফ সাহীদ আওয়ামী যুবলীগ উত্তর এর দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল এর সহযোগিতায় তার স্ত্রী তৎকালীন RAB-4 এর এএসপি জয়ীতা শিল্পীর ক্ষমতা ও শক্তি কাজে লাগিয়ে ওই ৮তলা বাড়ি দখলের উদ্দেশ্যে বিগত ১৩ই মার্চ ২০২১ তারিখে ইউসুফ সাহীদ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দখলের চেষ্টা করলে অভিযোগকারী তার পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় এলাকাবাসীর সহায়তায় উক্ত দখল প্রচেষ্টকে নসাৎ করে দেন এবং অভিযোগকারীর বড় ভাই এর বউ জাকিয়া সুলতানা বাদি হয়ে শাহআলী থানায় ইউসুফ সাহীদ গংদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এরপর ভূমিদস্য ইউসুফ সাহীদ, কামরুজ্জামান কামরুল ও RAB-4 এর এএসপি জয়ীতা শিল্পীর সহযোগিতায় গোপনে নীল নকশা প্রস্তুত করে ওই বাড়ি কব্জা করতে RAB এর ক্ষমতার অপব্যবহার করে কামরুজ্জামান কামরুল তার স্ত্রী RAB-4 এর তৎকালীন এএসপি জয়ীতা শিল্পী কে দিয়ে ২০২২ সালের ২৪শে এপ্রিল রমজান মাসে তারাবি নামাজের পর অভিযোগ কারীর মিরপুর বেড়িবাঁধস্থ পেট্রোল পাম্প থেকে বাসায় ফেরার পথে দিয়াবাড়ী ল্যান্ডিং স্টেশনের সামনে থেকে জয়ীতা শিল্পীর নেতৃত্যে ১০/১২ জন বিপথগামী RAB সদস্য মাহমুদুল হাসানের গাড়িকে সিগন্যাল দিয়ে নামিয়ে কালো জমটুপি পরিয়ে তাদের সাথে থাকা কালো গ্লাসের হাইয়েস মাইক্রোতে করে অপহরণ করে আট তলা বিল্ডিং এ নিয়ে গিয়ে সেখানে তার অফিসের ড্রয়ার থেকে বিভিন্ন দলিল পত্র নিয়ে দ্রুত বের হয়ে যান।
সেখান থেকে অভিযোগকারীকে বিভিন্ন অফিসে নিয়ে যান এবং তাকে জয়ীতা শিল্পী বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিল্ডিং এর দখল ইউসুফ সাহীদ এর কাছে বুঝিয়ে দিতে বলেন এবং একটি রুমে ইউসুফ সাহীদ ও কামরুজ্জামান কামরুল তাকে (মাহমুদুল হাসান) অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেন বলে অভিযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী।
পরবর্তীতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে RAB-4 এর অফিসে নিয়ে অরিজিনাল দলিল কব্জা করার অপচেষ্টা চালায় জয়ীতা শিল্পী। কিন্তু নির্যাতনের মুখেও মাহমুদুল হাসান জমির আসল দলিল তার কাছে নেই বা ব্যাংকে মর্ডগেস আছে জানালে জয়ীতার নেতৃত্বে বাকি RAB সদস্যরা মাহমুদুল হাসানকে সেহরি না খেতে দিয়ে সারারাত বেধড়ক মারপিট করে এবং তারপরের দিন সারাদিন নির্যাতন করার পরে মাহমুদুল হাসানকে মুমূর্ষ অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সন্ধ্যার পরে মিরপুর পুলিশ বিভাগের শাহআলী থানায় নিয়ে গেলে শাহআলী থানার তৎকালীন ওসি আসাদুজ্জামান আসাদ ইউসুফ সাহীদের নীল নকশা বাস্তবায়নে মাহমুদুল হাসানের নামে অস্ত্র, মাদক, জাল নোট এবং হরিণের চামড়া দেখিয়ে ৪ টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। শাহ আলী থানায় অভিযোগকারীর বড় ভাইয়ের বউ জাকিয়া সুলতানা অভিযোগকারীকে দেখতে আসলে তিনাকে সকল মামলায় দুই নম্বর আসামি দেখিয়ে থানায় আটক করে সারারাত নির্মম নির্যাতন করেন। মিথ্যা মাদক, ১৭ হাজার টাকার জাল নোট, একটি হরিণের চামড়া ও একটি দেশীয় তৈরি পিস্তল দিয়ে পিস্তলটিকে বিদেশী নাইন এমএম পিস্তল লিখে কোর্টে চালান করে । এরপর বিজ্ঞ আদালত তাৎক্ষণিক জামিন মঞ্জুর না করে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে বিজ্ঞ আদালত কাশিমপুর কারাগারে এবং ভূক্তভোগী মাহমুদুল হাসানকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠায়। ঐ সকল নাটকীয় মামলায় ভুক্তভোগীর বড় ভাইয়ের স্ত্রী চার দিন পর জামিনে মুক্ত হলেও মাহমুদুল হাসান কারাগারে থাকেন টানা ১৩ মাস।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ন্যায়বিচার পাবার আশায় ভুক্তভোগী বিগত ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে আওয়ামীলীগের অর্থ যোগানদাতা ইউসুফ সাহীদ ও আওয়ামী যুবলীগ মহানগর উত্তর এর দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল এবং তৎকালীন RAB-4 এর এএসপি জয়িতা শিল্পী (বর্তমান ফেনী জেলা পিবিআই এর এসপি) সহ অপরাপর সকল আসামীগনের বিরুদ্ধে অপহরণ সহ নানা নির্যাতনের অপরাধে বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন আদালতে জনাবা নাজমিন আক্তার এর আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন।
অভিযোগকারী বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মিনহাজ প্রধান রাব্বী জানান, আদালত সন্তুষ্ট হয়ে মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডি সঠিকভাবে তদন্ত করলে মামলার সত্যতা বের হয়ে আসবে এবং এতে আইনের প্রতি মানুষের যে আস্থা হারিয়ে গিয়েছিল তা আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে।
তিনি আরো বলেন এভাবে যদি রক্ষকরা ভক্ষক হয়ে ওঠে তাহলে সাধারণ মানুষের প্রশাসনের প্রতি আস্থা থাকবেনা, তাই মামলাটির সুষ্ঠু তদন্ত হয়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরী।
এ দিকে মাহমুদুল হাসান ওই ষড়যন্ত্র মূলক মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য এবং তাকে সামাজিক ভাবে হ্যায় প্রতিপন্ন কারীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দিনকাল/এমএইচআর