বগুড়ায় মোটরমালিক গ্রুপ দখল নিয়ে আওয়ামীলীগের সংঘর্ষ, সাংবাদিক পুলিশসহ- আহত ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৭ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৫ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
বগুড়া জেলা মটর মালিক গ্রুপের দখল নিয়ে আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ১০ ব্যক্তি আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে বগুড়ার চারমাথা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের মধ্যে পুড়িয়ে দেওয়া হয় অন্তত ১০ টি মোটরসাইকেল। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জেলা মোটরমালিক গ্রুপের কার্যালয়। একই সঙ্গে পুড়েছে শাহ ফতেহ আলী বাস পরিবহনের কার্যালয়ও। এ ঘটনার জেরে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ থাকে। বন্ধ ছিল বগুড়া নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কও। পরে দুপুর একটা দিকে পুলিশ লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
বগুড়া জেলা মোটর মালিক গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গত তিন বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর মধ্যে এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম মোহন। আরেক গ্রুপে রয়েছেন বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর আগে বগুড়া জেলা মটর মালিক গ্রুপের একটি নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আকতারুজ্জামান ডিউক সভাপতি ও আমিনুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তখন থেকে এই ভোটকে অবৈধ দাবি করে আসছেন মঞ্জুরুল আলম মোহন। তার দাবি, কোনো আইন কানুন না মেনেই নির্বাচন করা হয়েছে। এরপর আদালতে গড়ায় বিষয়টি। মঞ্জুরুল আলম মোহনের দাবি, আদালতের রায় তাদের পক্ষে এসেছে এবং রায় বাস্তবায়ন করতে অতিরিক্তি জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মোটরমালিক গ্রুপের সূত্র বলছে, বিরোধ নিষ্পত্তির পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইতিমধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম নির্বাচনের বিরোধীতা করে মোটর মালিক গ্রুপের অফিসসহ অন্যান্য কিছু তার নিয়ন্ত্রণে রাখে। মোহনের দাবি, আদালতের কোনো নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অথচ আমিনুলের নেতৃত্বে প্রতিদিন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার সকালের দিকে চারমাথায় মালিকরা গিয়েছিলাম আমিনুলের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে। এ খবর পেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুলের লোকজন চারমাথা এলাকায় সমবেত হয়। তারা আগে থেকে মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা করেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুই পক্ষই প্রস্তত হয়ে চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করেন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে গোটা চারমাথা এলাকায়। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় মোটরমালিক গ্রুপের কার্যালয়ে। পোড়ানো হয় অন্তত ১০ টি মোটরসাইকেল। এ সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) সদস্য রমজান আলী। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ ও সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বে পুলিশ চারমাথায় অবস্থান নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক সময় পুলিশের সামনেই আমিনুল গ্রুপের লোকজন পুলিশের সামনেই লাঠি মিছিল শুরু করে। এ সময় মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার নেতাকর্মী সান্তাহার সড়ক দিয়ে এলজিইডির সামনে অবস্থান নেয়। পুলিশ মাঝামাঝি অবস্থান নিয়ে থাকাকালে মোহন গ্রুপের দেড় দুই হাজার লোকজন লাঠিশোটা নিয়ে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে আমিনুল গ্রুপের লোকজনকে ধাওয়া করে। ধাওয়ায় তারা পালিয়ে গেলে মোহন গ্রুপের লোকজন টার্মিনাল এলাকা দখলে নিয়ে শুরু করে ব্যাপক ভাঙচুর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ জানান, পুলিশের সামনেই এলোপাতাড়ি যানবাহন ভাঙচুর ছাড়াও আমিনুলে নিয়ন্ত্রণে থাকা মোটর মালিক গ্রুপের অফিস ও তার ব্যক্তিগত অফিস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় চলে একমুখী তান্ডবলীলা। এ সময় ভাঙচুরের ছবি তুলতে গেলে জিটিভির ক্যামেরাপার্সন রাজু আহম্মেদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে মোহন গ্রুপের লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় সাতজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চারমাথায় আমিনুলের লোকজন অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। পুলিশের ধাওয়া ঘেয়ে তারা পালিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চারমাথা এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বগুড়া শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানে চারজন ভর্তি হয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে দুজনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা ছাড়াও পাঁচজন আহত হয়েছে। তাদের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।
অগ্নি সংযোগ ও সংঘর্ষের বিষয়ে জেলা মোটরমালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম জানান, ‘পরিকল্পিতভাবে মোহন তার গ্রুপের লোকজন নিয়ে জেলা মোটরমালিক গ্রুপ কার্যালয় দখল করতে এসেছিল। আমরা প্রতিহত করেছি। সংঘর্ষে লিপ্ত হইনি। অথচ তার লোকজন আমাদের উপর হামলা চালিয়ে অফিসে অগ্নিসংগোগ করেছে, ভাংচুর করেছে। আমি মোহনের গ্রেফতার চাই।’ তবে মঞ্জুরুল আলম মোহনের অভিযোগ, আমাদের উপর হামলা বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসন চেয়ে চেয়ে শুধু দেখেনি, আমাদের উপর হামলায় সহযোগিতা করেছে। সংঘর্ষে তার তিনটি বাসে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। হামলা করা হয়েছে তেলের পাম্পেও। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, আমরা খবর পেয়েছিলাম একটি পক্ষ মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখলের জন্য চারমাথা যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পরে সেখানে সংঘর্ষে এক পুলিশ ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের ঘটনায় সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। জেলা প্রশাসের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপের বিষয়টি জটিল। আমরা চেষ্টা করেছি সংকট সমাধানের। কিন্তু এর মধ্যেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল। ’