টঙ্গীবাড়ীতে খালের ভাঙ্গনে ৩৩ বসত ভিটা বিলীন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৪৪ পিএম, ২৩ অক্টোবর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:৪০ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে গত ১ মাসে খালের ভাঙ্গনে ৩৩ বসত ভিটা বিলীন হয়ে গেছে। এরমধ্যে গত ২দিনে ভাঙ্গনের তিব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১০ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। এনিয়ে উৎকন্ঠায় আছেও ওই এলাকার বেশ কিছু পরিবার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় টঙ্গীবাড়ী উপজেলার কাইচাইল গ্রামে ভাঙ্গন চলছে। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া তালতলী-গৌরগঞ্জ খালে তিব্র স্রোত বইছে। আর স্রোতের মধ্যেই চলাচল করছে বালুবাহী বাল্কহেড। স্রোত আর বাল্কহেডে উৎপন্ন ঢেউয়ে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসত ভিটা। ইতিমধ্যে ওই গ্রামের ১৫টি পরিবারের ৩৩টি বসত ভিটা ওই খালের মধ্যে বিলিন হয়ে গেছে। এতে ১৫টি পরিবারের কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তালতলা গৌরগঞ্জ খালটি মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার গৌরগঞ্জ এলাকার পদ্মা নদী হতে পাশের টঙ্গীবাড়ী ও সিরাজদিখান উপজেলা হয়ে সিরাজদিখান উপজেলার তালতলা এলাকার ধলেশ^রী নদীতে মিলিত হয়েছে।
কয়েক বছর আগেও খালটি মরা খালের মতো থাকলেও অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে এ খাল হতে মাটি কাটায় এবং এই খাল দিয়ে অসংখ্য বাল্কহেড চলাচল করায় বিগত কয়েক বছর ধরে এ খালের লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গত বছর টঙ্গিবাড়ী উপজেলার শিলিমপুর এলকার বেশ কিছু বসতভিটা এই খালে বিলিন হয়ে যায়। এ বছর শিলিমপুরের পাশের গ্রাম কাইচাইলে এই ভাঙ্গন চলছে। এলাকবাসীর অভিযোগ খাল হতে অবৈধভাবে বালু কর্তন আর অবাধে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলের কারনে এ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত এক মাসে কাইচাইল গ্রামের মনির হোসেন, জাহাঙ্গীর খান, ইমরান খান, মোতালেব বেপারী, শাহালম, আলমগীর, জাহাঙ্গীর, হাসমত আলী বেপারী, খালেক শেখ, বারেক শেখ, আব্দুল মালেক শেখ, সানাউল্লাহ বেপারী, আহসান উল্লাহ বেপারী, জসিম বেপারীসহ অন্যান্যদের ৩৩টি বসত ভিটা ওই খালে বিলীন হয়ে গেছে। বাপ ও চাচাদের মিলে মাত্র ৪ শতাংশ বসত ভিটা ছিল ওই গ্রামের দুই ভাই জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইমরান হোসেনের। দুই ভাইয়ের পরিবার ও মা তাসলিমা বেগমকে নিয়ে ওই ৪ শতাংশের মধ্যেই বসবাস করতো তারা। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে খালের পানির তিব্র স্রোতে ভেঙ্গে গেছে দুই ভাইয়ের বসতভিটা। এখন পাশের এক বাড়িতে টিন ও কাঠ দিয়ে নির্মিত তাদের ঘর দুটি রাখলেও তোলার মত স্থাণ পাচ্ছেন না। এর মধ্যে ইমরানের অপরের বাড়িতে ঠাই মিললেও মা তাসলিমা বেগম ছেলে জাহাঙ্গীর তার স্ত্রী রুপা বেগম এর ঠাই হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। প্রতিবেশী তোফাজ্জল হোসেন এর বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত ভিটায় চকি বিছিয়ে উন্মুক্ত আকাশের নিচে বাসবাস করছেন ওই পরিবারটি। চকি পেতে বসবাস করতে পারলেও চুলা জ¦ালানোর মতো স্থাণ আর আহার সামগ্রী নেই ওই পরিবারের। তাই প্রতিবেশীদের দেওয়া খাবারের উপর ভরসা করে অনাহারে দিন কাটছে ওই পরিবারের। পাননি কোন সরকারী সহয়তা কোথায় যাবেন জানেন না।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধা মা তাসলিমা বেগম (৬৫) কান্নায় ভেঙ্গে পরে বলেন, আমাদের যায়গা নেই, বাসা নেই। আমরা এখন অনেক অসহায় পরে আছি। কোথায় যাবো জানিনা। ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, আমাদের ৪ শতাংশ বাড়ি ছিল ভাইঙ্গা গেছেগা। কোথায় হতে কোথায়ও যাওয়ার মতো যায়গা নাই। খাওন বলতে কিছু নাই। গাছ তলায় বসে থাকি। গাছের তলায়ই খাওয়া দাওয়া করি। পাশের এক বাড়ি হতে ভাত দিয়ে যায়। দিয়ে গেলে খাই না দিয়ে গেলে না খেয়ে থাকি।
ভুক্তভোগী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ৭দিন যাবৎ আমাদের ঘর ভাইঙ্গা গেছে। বাড়ি ভাইঙা যাওয়ার পর পাশের বাড়ির এক ভাই বলতেছে আমাগো এখানে এখোন চকি বিছাইয়া আপতত থাক দেখি কি করতে পারি। এখন আমাদের থাকার কোন যায়গা নাই। আমরা খুব অসহায় আছি রাইতে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চা লইয়া থাকি। ওই এলাকার হাসমত আলী বেপারী স্ত্রী সালেহা বেগম (৭৫) ঘরের দরজায় বসে বিলাপ করছিলেন। পাশেই চলছে তার ছেলে আলমগীরের পাকা ভবন ভাঙ্গনের কাজ। এর আগে খালের ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে তার অপর তিন ছেলে জাহাঙ্গীর,মোতালেব ও শাহ আলম এর বসতভিটা। তিনি বিলাপ করতে করতে বলেন, বিয়ের পর স্বামী আমারে এই বাড়িতে এনে তুলছে। এখন সেই বাড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমার ছেলে নাতি নাতকুরদের নিয়ে কোথায় যাইবো।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য নবী হোসেন বলেন, খালের ওই পারে সম্রট কোল্ডস্টোর। সম্রাট কোল্ডস্টোরের মালিকেরা খালে ড্রেজার বসিয়ে এ পারের খালের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। এতে এপারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। অসহায় মানুষের বাড়িঘর ট্রয়লেড যা যা ছিল সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। এমন মানুষ আছে যাদের আর এক শতাংশ জমিও নাই ঘর উঠাইবো কোথায় এখন মানুষগুলোর যাওয়ার মতো কোন যায়গা নাই। আমি সরকারে কাছে তাদের জন্য সাহয্যের প্রর্থনা করছি। এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা ওই এলাকার চেয়ারম্যান এর কাছ হতে একটা লিষ্ট পেয়েছি। ভাঙ্গন চলমান। সরকারীভাবে নদী ভাঙ্গন কবলিতদের যে ধরনের সহয়তা পাওয়ার কথা তার সব ব্যবস্থাই আমরা করবো। একটি পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে তাকে অবহিত করলে তিনি বলেন আমি অবশ্যই তার স্লেটারের ব্যবস্থা করবো।