যানজটে নাকাল ঘরমুখো মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৬ পিএম, ৯ জুলাই,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৪৯ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পিয়ারখালী গ্রামের বাসিন্দা রজব আলী। ঢাকার একটি ওয়ার্কশপে হেলপার হিসেবে কাজ করেন। ঈদের ছুটিতে শুক্রবার (৮ জুলাই) দিবাগত রাত আড়াইটায় ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রওনা দেন। অন্য সময় ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী যেতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাইপাইল, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর ও টাঙ্গাইলে যানজটে পড়তে হয়েছে তাকে। শনিবার বিকেল ৩টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতি পর্যন্ত এসেছেন তিনি।
রজব আলী বলেন, ‘১৬ বছর যাবত ঢাকা যাতায়াত করি। কখনো এমন যানজটে পরিনি। ১৩ ঘণ্টায় অর্ধেক রাস্তা এসেছি। জানতে পারলাম, সিরাজগঞ্জেও যানজট আছে। বাকি সড়ক কীভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।’
শুধু রজব আলী নন, তার মতো হাজারো ঘরমুখো মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গাড়ি বিকল, সড়ক দুর্ঘটনা ও সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের যানজটের কারণে যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তি কমছে না।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার ভোররাতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে সড়ক দুর্ঘটনার কারণের ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট টোল আদায় বন্ধ রাখে সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
শনিবার (৯ জুলাই) সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপার থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। তবে এখনো ২৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, যানজট ও গরমে শিশু ও বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকেই বাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় বাসের ছায়ায় বসে পড়েছেন। কেউ কেউ শুয়েও পড়েছেন।
জোকারচর এলাকায় কথা হয় চাঁপাই সদরের তুহিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাত ১২টায় ঢাকার কচুক্ষেত থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। দুপুর আড়াইটায় জোকারচর পর্যন্ত এসেছি। চোখের সামনে ও পিছনে হাজারো গাড়ি। ক্ষুধায় টিউবওয়েলের পানি কিনে খেয়েছি।’
রাজশাহীর বিপ্লব বলেন, ‘আগে মিরপুর থেকে রাজশাহী যেতে সর্বোচ্চ ৭ ঘণ্টা সময় লাগতো। কিন্তু যানজটের কারণে ১৫ ঘণ্টায়ও টাঙ্গাইল ছাড়াতে পারলাম না। না খেয়ে থেকে ও গরমে দুর্বল হয়ে পড়েছি। ভেবেছিলাম অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও শান্তিতে বাড়ি ফিরতে পারবো। কিন্তু তা আর হলো না।’
পাবনার সখিনা বেগম বলেন, ‘১০ ঘণ্টা ধরে যানজটে থাকায় খুব কষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ থাকায় শরীর মনে হচ্ছে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
শিশু মাফিয়া আক্তার বলেন, ‘আমি মিরপুরে থাকি। বাবা-মার সঙ্গে ঈদ করতে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছি। কিন্তু চরম যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইতিপূর্বে টেলিভিশনের যানজটের খবর দেখতাম। আজ প্রথম যানজটের মুখোমুখি হলাম।’
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বাভাবিক সময়ে ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে পারাপার হয়। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত সেতুর উপর দিয়ে উত্তরবঙ্গগামী ২৯ হাজার ৭২টি যানবাহন যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয় ২ কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা।
অপরদিকে ঢাকাগামী ১২ হাজার ৮৭৮টি যানবাহন যানবাহন পারাপারে টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ৩ লাখ ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, ‘যানবাহন ধীরগতিতে চলছে। সড়কে গাড়ির প্রচুর চাপ রয়েছে। সড়ক স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।’