নেমে গেছে বন্যার পানি : সুনামগঞ্জ শহরে ময়লার স্তূপ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৮ এএম, ২৫ জুন,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ১০:২০ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুনামগঞ্জে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বন্যার পানিতে ভেসে আসা ময়লা-আবর্জনা ও জমে থাকা পচা পানির কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সুনামগঞ্জের মানুষ। দ্রুত পৌর শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি লাভের প্রত্যাশা সবার। তবে এত ময়লা-আবর্জনা সরাতে অন্তত ১৫-২০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পৌরসভা।
টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলের কারণে ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জ পৌর শহর। শহরের দোকানপাট, বিপণিবিতানগুলো খুলতে শুরু করেছে। তবে পৌর শহরের ভেতর চলাফেরা করার মতো পরিবেশ এখনো সৃষ্টি হয়নি। বন্যার পানিতে ভেসে আসা ময়লা আবর্জনা ও জমে থাকা পানি পচে গলে শহরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। গত কয়েক দিন ধরে শহরের প্রধান রাস্তাগুলো থেকে পানি নেমে গেছে। তবে রাস্তা, ড্রেন, বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় পচা ময়লা-আবর্জনা ও ময়লা পানি আটকে আছে এখনো। পাড়ায় পাড়ায় এখনো পৌঁছায়নি পৌরসভার ময়লা সংগ্রহকারী গাড়ি। অপসারণ হয়নি নোংরা আবর্জনা।
এতে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন শহরবাসী। হেঁটে চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে বিভিন্ন এলাকার কাঁচা পাকা সড়কগুলো। পাকা রাস্তাগুলোতে জমা হয়ে আছে ময়লার স্তূপ। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র আলফাত স্কয়ার (ট্রাফিক পয়েন্ট), ফল মার্কেট, জগন্নাথবাড়ি রোড, মাছবাজার, সবজি বাজার, পশ্চিম বাজার, মধ্যবাজার, পুরাতন বাস স্টেশনসহ মূল মূল সড়কগুলোতে এমন চিত্র দেখা দেখা গেছে।
শুধু শহরের মূল সড়কই নয়। একই অবস্থা বিরাজ করছে সুনামগঞ্জ পৌরসভার তেঘরিয়া, বড়পাড়া, বিহারী পয়েন্ট, হাজীপাড়া, সোমপাড়া, নতুনপাড়াসহ ৯টি ওয়ার্ডের সব জায়গায়। বন্যার পানির সঙ্গে অনেকের ঘরে ঢুকে গেছে ময়লা-আবর্জনা। বাড়ি ঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় এসব ময়লার স্তুপ জমছে বাসার সামনের সড়কে। এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভারী হয়ে ওঠছে সুনামগঞ্জের বাতাস।
স্থানীয়রা জানান, যেসব রাস্তাঘাটে ময়লা-আবর্জনা পড়ে রয়েছে এবং বন্যার পানি জমে আছে সেসব এলাকার হাঁটাচলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেকটা দম বন্ধ অবস্থা তাদের। বাজারের রাস্তায় ময়লা জমে থাকায় ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের পোহাতে হচ্ছে মাত্রা অতিরিক্ত দুর্ভোগ।
শহরবাসীর ভোগান্তি দূর করতে গত দুদিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাচ্ছে সুনামগঞ্জ পৌরসভা। তবে চাহিদার তুলনায় অবর্জনা সরানোর কাজ কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এখনো মূল বাজারেই বেহাল অবস্থা। পাড়া-মহল্লা কোন দিন পরিষ্কার হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এলাকাবাসী।
সুনামগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২২ কিলোমিটার সড়ক ও ১২ হাজার বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতে আর ১৫-২০ দিন সময় লাগবে। পৌরসভার কর্মীরা পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে আবার জমা হয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ায় সবাই বাসাবাড়ি পরিষ্কারের ময়লা এনে একটু পর পর ফেলছেন রাস্তায়। একদিকে পরিষ্কার করে আসলে আরেক বাসার ময়লা এসে জমা হয়ে যায়। বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ যতদিন চলবে, ততদিন পুরোপুরি পরিষ্কার করা সম্ভব না। পানিতে ভেসে আসা খালি বোতল, পলিথিনের ব্যাগ, বস্তা, গাছের ডাল এবং বার্ন কাঠের নষ্ট আসবাবপত্রের ময়লা সবচেয়ে বেশি পরিমাণে জমা হয়েছে। আবর্জনা অপসারণের পর জীবাণুমুক্ত করতে এসব স্থানে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে ব্লিচিং পাউডার।
শহরের কাজীর পয়েন্ট এলাকার এক দোকানি বলেন, পানি কমে যাওয়ায় দোকানে এসেছি। কিন্তু দোকান খোলার মতো অবস্থা বা পরিবেশ নেই। তাই আগে দোকানের সামনে পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা সরাচ্ছি।
পৌর শহরের সবুজ আহমেদ বলেন, বন্যায় সুনামগঞ্জের রাস্তাঘাটসহ দোকানপাট ঘরবাড়ি সব ডুবে যায়। যার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছে খাবার পানির। এখন সমস্যা হচ্ছে আবর্জনা। এসব আবর্জনা দ্রুত সরাতে হবে।
সোনালী ব্যাংকে কর্মরত বিল্লাল হোসেন জানান, ময়লা-আবর্জনায় এমন অবস্থা হয়েছে যে শহরে ঢুকার মতো পরিবেশ নেই। এগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। দ্রুত অপসারণের অনুরোধ জানাই।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখ্ত বলেন, বন্যায় সুনামগঞ্জ শহরের শতভাগ এলাকা পানির নিচে ছিল। বন্যার পানি কমার পর গত দুই দিন ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চলছে। পানি কমার পর লোকজন বাসাবাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। যার কারণে ময়লা-আবর্জনার পরিমাণ বাড়ছে। আমরাও কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শহরের মানুষ যেন পানিবাহিত কোনো রোগে আক্রান্ত না হন সেই চিন্তা করছি। আশা করি খুব দ্রুতই শহরকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে পারব।