উলিপুরে ভোট কেন্দ্রের বাথরুম থেকে ব্যালট উদ্ধার, বিক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের উলিপুরে চতুর্থ ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দুই দিন পর বাথরুম থেকে ব্যালট উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের ভদ্রপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাথরুম থেকে এসব ব্যালট পেপার উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় বিকেলে এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করা হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার ভোটারদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ওই এলাকার ভোটারদের অভিযোগ, গত রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়ম করেন সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসার। ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল দিতেও নানা টালবাহানা করে কালক্ষেপণ করা হয়। পরে প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের তোপের মুখে পড়ে রাত ১০টার দিকে ফলাফল প্রকাশ করেন প্রিজাইডিং অফিসার। প্রকাশিত ফলাফল নিয়ে নানা গুঞ্জন দেখা দেয় তাদের মাঝে।
গতকাল বুধবার ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী মাহবুবার রহমান স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রের বাথরুম খুলে শতাধিক চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত প্রার্থীর ব্যালট দেখতে পান। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দড়িচর পাঁচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের বাথরুম থেকেও বেশ কিছু ব্যালট পাওয়া যায়। ব্যালট পাওয়ার খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভ্যানগাড়ি প্রতীকের এজেন্ট মরিয়ম আক্তার মনি সাংবাদিকদের বলেন, ভোটের দিন দায়িত্বপ্রাপ্ত এক ব্যক্তি ব্যালট বই নিয়ে বাথরুমে যান। এ ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসারকে বিষয়টি জানালে তিনি আমলে নেননি। অনেক সময় পরও তিনি বাথরুম থেকে বের হননি। আমি বাথরুমের কাছে গেলে পুলিশ আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।
পরাজিত প্রার্থী মাহবুবার রহমান অভিযোগ করে বলেন, 'প্রিজাইডিং অফিসার ভোটগ্রহণের দিন নানা অনিয়ম করেছেন। তিনি আমাদের কোনো অভিযোগ শোনেননি। ভোটের পর থেকে মানুষজন কানাঘুষা করছিল। সকালে লোকজনকে সাথে নিয়ে স্কুলের বাথরুম খুলে এসব ব্যালট দেখতে পাই। বাথরুমের ভেতরে পুড়ে যাওয়া ব্যালটসহ শতাধিক ব্যালট পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত ভোটের সাথে ব্যালট পেপারের হিসাবে গরমিল রয়েছে। হাউজের ভেতরে আরো ব্যালট থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
ধামশ্রেনী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সিরাজুল হক সরদার বলেন, এ কেন্দ্রে একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিকে প্রিজাইডিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসব কাজ করেছেন। এ কেন্দ্রে অভিযান চালালে ২/৩ ব্যালট পাওয়া যাবে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট জোর দাবি জানান তিনি।
প্রিজাইডিং অফিসার মাহমুদুল হাসান রানু বলেন, সারা দিন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ভোট গণনা শেষে ফলাফলও প্রার্থীদের হাতে দেওয়া হয়েছে। ব্যালটের হিসাব আমার কাছে সঠিক আছে। এই ব্যালট কোথা থেকে এলো, আমার কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আহসান হাবিবের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম রাকিব এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে উত্তেজিত জনতা বিকেলে ভদ্রপাড়া এলাকায় মানববন্ধন করে। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিন করে উপজেলা নির্বাচন অফিসের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়ে ইউএনও কে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার স্মারকলিপি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।