চৌগাছায় ভেঙ্গে পড়া ব্রিজটি তিন বছরেও নির্মান হয়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০০ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২৪
যশোরের চৌগাছার পাতিবিলা ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা একটি খালের উপর ৩ বছর ধরে একটি ব্রিজ ভেঙ্গে আছে। স্থানীয়রা চলাচলের জন্য ভাঙ্গা ব্রিজের উপর যেনতেন ভাবে সাকো তৈরী করে ঝুকি নিয়ে চলাচল করছেন। বছরের পর বছর পার হলেও নতুন ব্রিজ নির্মানে কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসি জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজটি দ্রুত নির্মানের দাবি জানিয়েছেন।
ভবানীপুর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহমান বুড়ি ভৈরব নদ। নদের তীরে অবস্থিত গ্রামটির মাঝ দিয়ে একটি খাল উত্তরে মাঠের সাথে মিশে গেছে। বর্ষা হলেই পাশ্ববর্তী তেঘরী, মুক্তদাহ, জগদীশপুর গ্রাম ও মাঠের পানি এই খাল দিয়ে পাশে বুড়ি ভৈরব নদে এসে পড়ে। স্থানীয়রা খালটিকে ভবানীপুর খাল হিসেবে চেনেন।
ভবানীপুর গ্রামবাসি সহ পাশ্ববতী গ্রামের মানুষের চলাচলের জন্য বহু বছর আগে খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মিত হয়। ফলে কৃষকদের মাঠের ফসল ঘরে তোলা, ছোট্ট শিশুদের স্কুলে যাতায়াত করায় আমুল পরিবর্তন আসে। কিন্তু ২০১৯ সালে হঠাৎ করেই ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে। সাথে সাথে মানুষের অভাবনীয় দূর্ভোগ দেখা দেয়। গ্রামের মানুষ বলাচলে অনেকটাই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন।
একপর্যায় স্থানীয় যুবকদের সহযোগীতায় যেনতেন ভাবে ভাঙ্গা ব্রিজের উপর একটি বাঁশের সাকো তৈরী করেন। এই সাকো দিয়ে জীবনে ঝুকি নিয়ে কোমলমতি শিশুসহ সকলেই গত তিন বছর ধরে চলাচল করছেন। ব্রিজটি ভেঙ্গে যাওয়ার সাথে সাথে গ্রামের অনেকেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ উপজেলা প্রকৌশল অফিসকে অবহীত করেন। অনেকেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু তিন বছরেও সেই আশ্বাস পুরোন হয়নি অভিযোগ গ্রামবাসির।
শনিবার সরেজমিন যেয়ে দেখা গেছে, খালটি দিয়ে প্রবল স্রোতে পানি নামছে পাশে বুড়ি ভৈরব নদে। ভাঙ্গা ব্রিজের উপর বাঁশের সাকো আছে ঠিকই কিন্তু মেরামতের অভাব এক দিকে হেলে পড়েছে। সেই হেলে পড়া সাকো দিয়ে বয়োবৃদ্ধ, শিশুরা পারাপার হচ্ছেন। পানির প্রবল স্রোতে খালের পূর্বপাশে জৈনক সিরাজুল ইসলামের বসত বাড়িও বর্তমানে হুমকির মুখে।
এসময় কথা হয় গ্রামের ব্রিজ সংলগ্ন বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, কয়েক গ্রামের মাঠ ঘাটের পানি এই খাল দিয়ে পাশে নদে নামে। প্রতি বছর বর্ষায় প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়, এতে করে খালের পাশের মাটি ভেঙ্গে খাল পাড়ের বসতবাড়ি হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভাঙ্গা ব্রিজের পাশেই একটি বাড়ি চরম হুমকির মুখে রয়েছে।
ভবানীপুর গ্রামের হাফিজুর রহমান, হচেন আলী, সানাউল্লাহ বলেন, কৃষকের মাঠের ফসল ঘরে তোলার একটি মাত্র রাস্তা, সেই রাস্তার ব্রিজ গত ৩ বছর ধরে ভেঙ্গে রয়েছে অথচ নির্মানের কোনই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা। কৃষকরা অসহনীয় কষ্ট ভোগ করে বছরের পর বছর মাঠের ফসল নিয়ে ভাঙ্গা ব্রিজ অতিক্রম করে বাড়িতে আসেন। গৃহবধু হাজেরা খাতুন, খাদিজা বেগম বলেন, স্থানীয় প্রাইমারী স্কুলে আমাদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করেন। ভাঙ্গা ব্রিজের উপর বাঁশের সাকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে তাদের স্কুলে যেতে হয়। দ্রুত ব্রিজটি নির্মান করা হলে সকলেই উপকৃত হবেন।
পাতিবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল বলেন, এলাকাবাসি ওই ভাঙ্গা ব্রিজের কারনে অনেক কষ্ট ভোগ করেন। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রকৌশল অফিসকে বেশ আগেই জানিয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলী মনসুর রহমান বলেন, আমরা বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থলে গেছি, সেখানে ব্রিজটি জরুরী, তবে প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যেমে কাজ করতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় সেটি পিআইও অফিসকে অবহীত করা হয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ব্রিজটি অনেক আগেই নির্মান হত, তবে করোনার কারনে কাজ থমকে যায়। আমাদের তালিকায় ওই ব্রিজ অগ্রধিকারে আছে, নতুন বছরে টেন্ডার হওয়া মাত্রই সেখানে নতুন ব্রিজের নির্মান কাজ শুরু করা হবে।