নাম-ঠিকানা একজনের, ২০ বছর ধরে কারারক্ষীর চাকরি করছেন আরেকজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৬ এএম, ২২ নভেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩৪ এএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মঈন উদ্দিন খান হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মো. নুর উদ্দিন খানের ছেলে। অনেক আশা ছিল সরকারি চাকরির। ২০০১ সালে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কারারক্ষী পদে চাকরির জন্য কুমিল্লা কারাগারে হাজির হন তিনি। শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়েছেন। কুমিল্লা কারাগার থেকে তার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। তবে তাকে চাকরির যোগদানপত্র পাঠানো হয়নি। ফলে সরকারি চাকরির আশা বাদ দিয়ে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন মঈন উদ্দিন খান। নিয়োগ পরীক্ষার ২০ বছর পর জানা গেলো তার নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে সিলেট কারাগারে চাকরি করছেন আরেকজন ব্যক্তি। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি। বিষয়টি জানাজানি হলে হবিগঞ্জ কারাগারের জেলারকে তদন্তের নির্দেশ দেয় সিলেট কারা কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২ আগস্ট কারারক্ষী (ক্রমিক নং-২১৮৬২) মঈন উদ্দিন খান চাকরি করছেন বলে শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খানের কাছে সিলেটের কারা উপ-মহা পরিদর্শক মো. কামাল হোসেনের কার্যালয় থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন খান ওই চিঠি পেয়ে একটি প্রত্যয়নপত্রের মাধ্যমে মঈন উদ্দিন খানকে জানান করেন। ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রটি পেয়ে মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী পদে চাকরি করেন না এবং তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য কোনো ব্যক্তি চাকরি করছেন বলে জানান। এ নিয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর মাধবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রিও (জিডি) করেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে ইউপি চেয়ারম্যান ১৬ নভেম্বর সিলেটের কারা উপ-মহা পরিদর্শকের কাছে একটি প্রত্যয়নপত্র পাঠান।
এতে উল্লেখ্য করা হয়, মঈন উদ্দিন খান একজন ফার্মেসি ব্যবসায়ী। তিনি কারারক্ষী হিসেবে চাকরি করেন না। পরবর্তীতে কারা উপ-মহাপরিদর্শক এ প্রত্যয়নপত্র পেয়ে মঈন উদ্দিনকে সশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঈন উদ্দিন সিলেট কারাগারে গিয়ে কুমিল্লা কারাগারে কারারক্ষী পদে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি জানান। একইসঙ্গে চাকরিতে যোগদানের জন্য লিখিত আবেদন করেন। সিলেটের কারা উপ-মহাপরিদর্শক কামাল হোসেন বিষয়টি তদন্ত করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য হবিগঞ্জ কারাগারের জেল সুপারকে নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী জেল সুপারের পক্ষে জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা কাগজপত্রসহ মঈন উদ্দিন খানকে এবং তার নামে চাকরি করা ব্যক্তিকে সশরীরে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী শাহজাহানপুরের মো. মঈন উদ্দিন খান এলাকার সাবেক চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে শনিবার হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হন। তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলার জয়নাল আবেদীন ভূঞা দিনভর মঈন উদ্দিন খান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু মঈন উদ্দিন খানের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে কুমিল্লার যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তিনি হবিগঞ্জ কারাগারে হাজির হননি। মঈন উদ্দিন খান বলেন, সরকারি চাকরি করার অনেক আশা নিয়ে কারারক্ষী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আমি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় কুমিল্লা কারাগার থেকে আমার ঠিকানায় অধিকতর তদন্ত করা হয়। ভেবেছিলাম আমি চাকরি পাবো। কিন্তু রহস্যজনক কারণে আমার যোগদানপত্র না আসায় আমি চাকরিতে যোগদান করতে পারিনি। যখন আমার কাছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চিঠি আসে তখন আমি এ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারি।
এ ব্যাপারে জেলার মো. জয়নাল আবেদীন ভূঞা বলেন, তদন্তকালে দুজনের হাজির হওয়ার কথা থাকলেও অভিযুক্ত কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান আসেননি। কিন্তু শাহজাহানপুরের মঈন উদ্দিন খান তার কাগজপত্র নিয়ে কারাগারে হাজির হয়েছেন। আমরা তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। একই সঙ্গে তার এলাকার কয়েকজন মুরব্বিদেরও জবানবন্দি নিয়েছি। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আরও তদন্তের স্বার্থে আমি সরেজমিনে শাহজাহানপুর এলাকায় যাবো। পরবর্তীতে আমার তদন্ত প্রতিবেদন সিলেট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। জেলার জয়নাল আবেদীন বলেন, মঈন উদ্দিন খান নামে যে ব্যক্তি চাকরি করছেন তিনি হাজির না হওয়ায় তার প্রকৃত নাম, বাবার নাম ও ঠিকানা সম্পর্কে কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।