খুলনায় স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ পুড়িয়ে গুমের চেষ্টায় ঘাতক স্বামীর মৃত্যুদন্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ পিএম, ৩১ অক্টোবর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
স্ত্রী হত্যার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার রায়ে স্বামী রফিক শেখকে মৃত্যুদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। অপর একটি ধারায় তাকে আরও ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
আজ রবিবার খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনামুল হক রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দন্ডপ্রাপ্ত রফিক শেখ রূপসা উপজেলার নেহালপুর গ্রামের মৃত আবেদ শেখের ছেলে। সে কবুতর পালন ও মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, রফিক শেখের সাথে ফকিরহাট উপজেলার হালিমা বেগমের ছোট মেয়ে মরিয়মের বিয়ে হয় ২০১৭ সালে। বিয়ের পর তারা বেশ সুখে ছিল। মরিয়ম মোবাইলে তার বাবার বাড়িতে একটু বেশী কথা বলায় তার জীবনে কাল হয়ে দাড়ায়। মোবাইলে কথা বলাকে সন্দেহ করত স্বামী রফিক। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ বিবাদ লেগেই থাকতো। এক পর্যায়ে তারা উভয় নেহালপুর থেকে ফকিরহাট উপজেলার খাজুরা এলাকায় রকি শেখের বাড়িতে ভাড়াটিয়া ওঠে। সেখানে এসেও তারা কলহে লিপ্ত হয়।
২০২০ সালের ১২ আগস্ট দুপুর ১২ টায় বাড়ি এসে রফিক তার স্ত্রীকে না পেয়ে সন্দেহের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। বাইরে থাকার কারণ জানতে চায় সে। উত্তর দিতে না পারায় স্ত্রীকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই দিন সকালে রফিক রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামের দীপক দাসের পানের বরজের মধ্যে পেট্রোল ও একটি বস্তার মধ্যে কয়েকটি ইট রেখে আসে। রাতে বেড়ানোর কথা বলে দু’জন রূপসা ব্রীজসহ বিভিন্ন জায়াগায় ঘুরতে থাকে। রাত ১০ টায় উভয় ঘটনাস্থলে পৌছালে রফিক পানের বরজের সামনে এনে ছলনার আশ্রয় নিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই ভিকটিমকে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করতে থাকে।
এক পর্যায়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে তার শরীরে বস্তা পেচিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর আসামি রফিক শেখ বাড়ি ফিরে গিয়ে মরিয়মের মাকে প্রতিবেশী রঞ্জন বৈরাগীর মাধ্যমে জানায়, মরিয়মকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। মরিয়মের মা সম্ভাব্য আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নিতে থাকে। এর দু’দিন পর তার অর্ধগলিত ও পোড়া লাশ পাওয়া যায় পানের বরজের মধ্যে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রির্পোট তৈরি করে মর্গে প্রেরণ করে। হালিমা বেগম লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে গিয়ে তার মেয়েকে সনাক্ত করে।
ওই ঘটনায় নিহতের মা হালিমা বেগম বাদী হয়ে রফিক শেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার জনের বিরুদ্ধে রূপসা থানায় মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ৩১ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: শাহাবুদ্দিন গাজী রফিক শেখকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।