কারাগার থেকে বের হয়ে, পুলিশ সেজে ছিনতাই
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৪ এএম, ২০ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৮ পিএম, ৯ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
গাজিপুরের কাশেমপুর কারাগার থেকে পরিচয়। বের হয়ে সংঘবদ্ধভাবে মোটর সাইকেল ছিনতাই করতো ওরা। সাথে নগদ টাকা ও মালামাল। টার্গেট ছিলো দামি ও নতুন মোটর বাইকের দিকে যেটায় চালক একাই থাকতো এবং গন্তব্য থাকতো দুরবর্তী কোথাও। দলের সবাই সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গাড়ির চালাতো। সামনের গাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে ছিনতাই করার সময় পেছনে থাকতো আরো একটি প্রাইভেট কার। সাথে থাকতো ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাপ ও পুলিশের বিশেষ পোষাক। কাজ শেষে প্রাইভেট কারে করে পালাতো ওরা। এমন একটি ঘটনার অভিযোগ পেয়ে সংঘবদ্ধ এই ছিনতাইকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের নিকট হতে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারসহ হ্যান্ডকাপ, ওয়াকিটকি, পুলিশের বিশেষ পোষাক ও লাঠি উদ্ধার হয়েছে।
আজ রবিবার দুপুরে ফরিদপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন সরকার ও কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল জলিল উপস্থিত ছিলেন। আটককৃতরা হচ্ছে, মধুখালীর বাগাটের জাকির হোসেন বিশ্বাসের ছেলে জুয়েল রানা (৩১), তার ভাই আল আমীন (৩০), আলফাডাঙ্গার কামারগ্রামের রবিউল আলমের ছেলে বাবুল আক্তার (৪৩), বালিয়াকান্দির আড়পাড়া গ্রামের বাল্লুক মৃধার ছেলে অশিক মৃধা (৩৭) ও আশুলিয়ার রফিকুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন (২৩)।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জামাল পাশা জানান, মুন্নু শেখ (৩৫) নামে একজন এনজিও কর্মী গত ৯ সেপ্টেম্বর মোটর সাইকেলে ঢাকার বাড্ডা হতে বাড়ি ফেরার পথে রাত ৯ টার দিকে পাঁচ ছিনতাইকারী কানাইপুরের করিমপুর হাইওয়ে ব্রিজের উপর থেকে তাকে একটি মাইক্রোবাসে থাকা তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। তারপর প্রথমে তার সাথে থাকা বেতনের ৩৫ হাজার টাকা ও বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা সাড়ে ১৯ হাজার টাকা সহ তার মোটর সাইকেলটি ছিনিয়ে তাকে মাইক্রোবাস হতে নামিয়ে পালিয়ে যায়।
এব্যাপারে ঘটনার শিকার মুন্নু শেখ বলেন, ছিনতাইকারীরা প্রথমে তার মোটর সাইকেলের চাবি কেড়ে নিতে গেলে তার সাথে ধস্তাধস্তি হয়। পরে তাকে পাজাকোলা করে গাড়িতে তুলে চোখ বেঁধে ফেলে। তার সাথে থাকা টাকা পয়সা কেড়ে নেয়ার পর তাকে বাড়ি থেকে ফোন করে ২ লাখ টাকা পাঠানোর জন্য বলতে বলে। এরপর তিনি বাড়িতে ফোন করে যতো টাকা পারে পাঠাতে বলেন। তিনি বলেন, টাকা পয়সা নেয়ার পর ছিনতাইকারীরা চোখ বেঁধে তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দিতে চাইলে তিনি তাদের চোখ খুলে নামিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।
উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এই চক্রের মূল মাস্টার মাইন্ড হচ্ছে জুয়েল রানা। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ১৬টি মামলা রয়েছে। একটি মামলায় সাড়ে চার বছর সাজা খেটে কোরবানীর ঈদের আগে সে জেল হতে বেরে হয়। তার ভাই আল আমীন ছিনতাইকৃত টাকার ব্যবস্থাপনা করতো। চক্রের কেউ গ্রেফতার হলে তাকে টাকা পয়সা খরচ করে বের করার দ্বায়িত্বও ছিলো আল আমীনের উপর। এই চক্রের অপর সদস্য বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে সাতটি মামলা রয়েছে। সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে একটি ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে জুয়েল ও বাবুল জেলে যায়। সেখান থেকে তাদের সাথে অন্যদের পরিচয় হলে গত বছর জেলে বসেই তারা সংঘবদ্ধ এই দল গঠন করে। রাতের বেলায় একাকী মোটর সাইকেলে দূরবর্তী গন্তব্যে বের না হতে সকলকে অনুরোধ জানানো হয় প্রেস ব্রিফিংয়ে।