জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি আইনজীবী সমিতির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৮ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৬ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেলা আইনজীবী সমিতির বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মিথ্যা দাবি করে অনতিবিলম্বে সেই বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইনজীবী সমিতির নেতারা।
আজ রবিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ ঘোষণা দেন।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সম্মান ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আইনজীবী সমাজ সংঘাতে বিশ্বাস করে না বলেই জেলা প্রশাসনের সকল অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সব সময় আইনি পথে হেটেছে। জেলা প্রশাসক বিভিন্ন গণমাধ্যমে জেলা আইনজীবী সমিতির নামে যে মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার না করলে আইনি ব্যবস্থার পথে হাটবো।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সমিতির ভবনসমূহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আইন মন্ত্রণালয়ের অনুদানে এবং সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়। ভবনসমূহ নির্মাণে বিভিন্ন দফায় মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও আইন মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেয়া হয়। সমিতির কোন ভবন অবৈধ হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোন মন্ত্রণালয় অনুদান প্রদান করতেন না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনগুলো সিডিএ থেকে যথাযথ ভাবে অনুমোদিত। যা সিডিএ থেকে জেলা প্রশাসনকে পত্র মারফতে ইতিপূর্বে জানানো হয়েছে এবং পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনসমূহ নির্মাণের সময় কোন পাহাড় টিলা কাটা হয়নি। পাহাড়ের ঢালু রক্ষা করে অর্থাৎ পাহাড়ের আকৃতি, প্রকৃতি বিনিষ্ট না করে ধাপে ধাপে ভবনগুলো নির্মাণ কর হয়। যদি পাহাড় টিলা কাটা হত তবে নিশ্চয় সে সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধা প্রদান করতো।
তিনি আরও বলেন, বিগত ২০১৪ সালে আইনজীবী সমিতির শাপলা ভবন নির্মাণের সময় সীমানা নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসকের সম্মতিতে ও পরামর্শে সমিতির নেতৃবৃন্দ ও তৎকালীন অতি. জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ ইলিয়াছ, জেলা প্রশাসনের কাননুগো, সার্ভেয়ারের উপস্থিতিতে জায়গা পরিমাপ করা হয়। পরিমাপে সমিতির জায়গার সীমানা চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। যেখানে বহুপূর্বে সমিতির সিকিউরিটি গার্ড রুম, জেনারেটর রুম নির্মাণ করা হয় যা বর্তমানেও আছে। ২০১৪ সালে পরিমাপ করে সমিতিকে যে জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়, সে জায়গার অংশে জেলা প্রশাসক কর্তৃক ২০১৯ সালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংককে বুথ স্থাপনের জন্য লীজ প্রদান করা হলে তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলা করা হয়। আদালত মামলায় সমিতির পক্ষে নিষেধাজ্ঞা দেন। এর ফলে জেলা প্রশাসন স্থানে ব্যাংকের বুথ স্থাপনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন। মুলত সেখান থেকেই জেলা প্রশাসন সমিতির সাথে বৈরি আচরণ শুরু করে।
এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘শত বছরের ঐতিহ্যে লালিত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সম্মান, মর্যাদা ক্ষুন্ন করার জন্য জেলা প্রশাসনের এহেন ঘৃণিত প্রয়াস দুঃখজনক। এছাড়া পানি সংযোগ, গ্যাস সংযোগ, বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন দফতরে পত্র প্রেরণ করেছে। প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির ভবন যাতে নির্মাণ হতে না পারে, সেজন্যই জেলা প্রশাসন থেকে এমন ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির স্থাপনাসমূহকে উদ্দেশ্য করে জেলা প্রশাসন কর্তৃক গত ২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। অথচ কোর্ট বিল্ডিং এর চারপাশে সমিতির কোনও অবৈধ স্থাপনা নাই। কোনও ছাত্রাবাসও নাই। দোকানপাট, খাবার হোটেল, মুদি দোকান, বস্তি ইত্যাদি স্থাপনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক লিজ প্রদানকৃত জায়গায় ও কিছু অংশ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্তৃক ভাড়ায় লাগানো হয়েছে। যা থেকে তারা মাসিক ও দৈনিক ভাড়া উত্তোলন করে। এসব স্থাপনায় অনৈতিক কাজ, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি হয়ে আসছে, যা বন্ধে জেলা প্রশাসন থেকে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এই সুযোগে ২০০৫ সালে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় জঙ্গি হামলা হয়েছিল।
সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ এইচ এম জিয়াউদ্দিন, বদরুল আনোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনতোষ বড়ুয়া প্রমুখ।