ভোলা জিয়া সুপার মার্কেট ভেঙে দখলে নেয়ার পাঁয়তারার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৪ এএম, ২৭ আগস্ট,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪৪ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ভোলা জিয়া সুপার মার্কেট ভেঙে দখলে নিয়ে ব্যবসায়ীদের পথে বসানোর জন্য একটি কুচক্রি মহল দীর্ঘদিন যাবৎ পাঁয়তারা করে আসছে বলে অভিযোগ করেন মার্কেটের ব্যসায়ী মালিক সমিতি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে মার্কেটের নতুন ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচার করায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মালিক সমিতি।
মার্কেটের ব্যবসায়ী মালিক সমিতি জানান, জিয়া সুপার মার্কেটের পূর্ব পাশে অবস্থিত পুরাতন মাছ বাজার-বর্তমানে মুড়ি ও পান-সুপারি বাজার জিয়া সুপার মাকের্ট হিসাবে চলছে, ওই মার্কেটটি পরিত্যক্ত। একটি চক্র উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জিয়া মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে সংবাদ প্রচার করে। সংবাদে যারা জিয়া সুপার মার্কেটকে শপিং মল বানানোর দাবি জানিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন তারা মার্কেট বা ব্যবসায়ীদের কেউ নন। ব্যবসায়ীরা যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রকাশ করা হয়নি। জিয়া মার্কেটের নামে-মার্কেটের পিছনের ঝুঁকিপূর্ণ বর্তমানে পান-মুড়ির বাজারের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ২০০৭ সালে জিয়া সুপার মার্কেটের ৩য় তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। পুরাতন মুড়ি পট্টি মার্কেট ভেঙ্গে জিয়া মার্কেটের সাথে যোগ করে ১ ও ২য় তলায় ৩৬টি রুম করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৬ টি দোকান জিয়া মার্কেটের নামে চলে।
৩য় তলার কাজ শেষ করে টেন্ডারের মাধ্যমে, পৌরসভার চাহিদা মতে অর্থের (অফেরতযোগ্য) বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে (মালিকানা) দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে ১০০টির উপরে দোকান আছে ওই মার্কেটে। বর্তমানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার কোটি টাকার মূলধন বিনিয়োগ করে, ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করছেন। সেখানে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন। ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাথে আলাপ না করে হঠাৎ পৌর মেয়র ২০১১ সালে জিয়া সুপার মার্কেটকে ভেঙে জিয়া শপিং মল নামে ভবন করার জন্য ও মার্কেটে দোকান বরাদ্দ চলছে বলে সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। যেখানে বর্তমান মালিকেরা দোকান ঘর থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র ছিল। তা বুঝতে পেরে-মালিক সমিতির ওই সাইনবোর্ড দেখে মেয়রের সাথে দেখা করলে তিনি ব্যবসায়ীদের মালামাল নিয়ে বসার বিকল্প ব্যবস্থা না করে-ব্যবসায়ীদেরকে মালামাল সরিয়ে নিয়ে, মার্কেট ছেড়ে দিতে বলেন। ব্যবসায়ীগণ তৎকালীন সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে উক্ত ঘর পজেশন নিয়েছে। ওই পজেশন হিসাবে তারা ঘরের মালিক। ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল নিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়। তারা কোন পথ না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে হাইকোর্টে রিট করে, যার নং- ৮৮১২/২০১১। হাইকোর্ট শুনানির পরে ব্যবসায়ীদের পক্ষে রায় দেন। পৌর মেয়র আবার-রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করে, রিভিউর পরে চেম্বার কোর্টে যায়, চেম্বার কোর্ট হাই কোর্টের রায় বহাল রাখেন। পরবর্তীতে মেয়র সুপ্রিম কোর্টে আবার আপিল করেন। যার নং- ২৮২৯/২০১৩, সুপ্রিম কোর্ট শুনাীনর পরে নিম্ন কোর্টের রায় বহাল রেখে ব্যবসায়ীদের সাথে সমঝোতা করে মার্কেট উন্নয়ন, বহুতল ভবন নির্মান কাজ করা যাবে বলে রায় প্রদান করে। তার পর থেকে মেয়র ব্যবসায়ীদের সাথে কোন যোগাযোগ না করে-গণপূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা উক্ত মার্কেটটি পরিত্যক্ত করার চেষ্টা চালায়। তখন গণপূর্ত বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার একটি সাব কমিটি গঠন করে, ওই কমিটি তদন্ত করে-তারা ১ম তলা ভবনের কিছু দোকান ঘর মেরামত (রিপিয়ারিং) করার যোগ্য বলে সুপারিশ করেন। বর্তমানে মালিক সমিতির সাথে যোগাযোগ ছাড়াই হঠাৎ করে কিছু মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করে মার্কেট ভাঙার অশুভ পাঁয়তারা চালিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মালিক সমিতি। বর্তমান মেয়র ২০১১ সাল থেকে এই পর্যন্ত-মার্কেটের রং, চুনা, সাধারণ প্লাস্টার কিছ্ইু করেননি। বরং পানির লাইন ও কারেন্টের লাইনসহ যাবতীয় উন্নয়নমুখী সকল কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যবসায়ীরা মার্কেটের সৌন্দর্য রক্ষা করার স্বার্থে নিজ খরচে-সৌন্দর্য করতে চাইলে তা করতে পারেননি। মার্কেটে ময়লা-আবর্জনার বাগাড় বানানোর চেষ্টা চলছে। ২০২১ সালে মেয়র মহোদয় নতুন করে ৩টি দোকান ঘর করে, সিঁড়ির সামনে-১টি, ২য় তলায়-গলির পথ বন্ধ করে-১টি এবং মসজিদে যাওয়ার পথ বন্ধ করে-১টি। তা তার পছন্দের লোককে বরাদ্দ দেন। ৩টি দোকান করায় মার্কেটের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এবং ব্যবসায়ী ও কাস্টমারের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এটি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। জিয়া সুপার মার্কেটকে বহুতল ভবন করতে চাইলে, মার্কেট কমিটির সাথে আলোচনা করে, তাদের দোকানের মালামাল নিয়ে বসার বিকল্প স্থান, বরাদ্দ প্রাপ্ত সকল মালিকদের যথাস্থানে সমপরিমাণ রুম প্রদান নিশ্চিত এবং সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অনুসরণ করে মার্কেটে বর্ধিত ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা দাবি জানান ব্যবসায়ী মালিক সমিতি।
এব্যাপারে পৌর মেয়র আলহাজ্ব মনিরুজ্জামান মনির জানান, বর্তমানে জিয়া সুপার মার্কেটের মালিক সমিতি যে অভিযাগ করেছেন তার মধ্যে অনেকটি সত্য নয়। জিয়া সুপার মার্কেটটির অর্ধেক অংশ খুব পুরাতন ভবন, এটি পৌরসভার একটি বিশাল সম্পদ। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় ৬ একর জমির মধ্যে সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন মার্কেট ( জিয়া শপিং মল) করলে দোকান ঘর বাড়বে, আরো ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করার সুযোগ পাবে, পৌরসভার আয়ও বাড়বে এবং এ মার্কেটে ক্রেতা সমাগমও বেশি হবে।