ঘরে ডেঙ্গু বাইরে করোনা, কাটছেই না দুর্ভাবনা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২:৪৫ এএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:১২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঘরে ডেঙ্গু বাইরে করোনা, কাটছেই না দুর্ভাবনা। এমনই এক মহাসংকট অতিক্রম করছে দেশ। অতিমারি করোনায় গোটা দেশের মানুষ যখন নাস্তানাবুদ, ঠিক এমন সময় ডেঙ্গু ভীতি বেড়েছে। প্রতিদিনই কয়েকশ মানুষ নতুন করে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিটের রোগী সামাল দিতেই যেখানে হিমশিম খেতে হচ্ছে, সেখানে প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার প্রজাতির মশা থাকলেও কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষকেরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২৩ প্রজাতির মশার খোঁজ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে মশার ১৪টি প্রজাতি। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মশাবাহিত ৫টি রোগের কথা জানা যায় বলে জানিয়েছেন, কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। যার মধ্যে রয়েছে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জাপানিজ এনসেফালাইটিস। গেল কয়েক মাস ধরে দেশে ডে ঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এডিস মশার দুটি প্রজাতি- এডিস ইজিপ্টি ও অ্যাবোপিকটাস, মূলত ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবাণু ছড়ায়। এডিস মশা পাত্রে জমা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। সাধারণত বর্ষাকালে এর ঘনত্ব বেশি হয়, ফলে এসময়টাতেই বাড়ে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব। তবে চলতি বছর বাংলাদেশে করোনা মহামারির পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বহুগণ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ও ডেঙ্গুর উপসর্গ নিয়ে ৮ হাজার ৪১ জন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায়ও নতুন করে ২৯১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু হয়েছে কিনা, কীভাবে বুঝবেন? আসলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে ডেঙ্গুর কিছু লক্ষণ ধরা পড়ে। ডেঙ্গু হলে সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেইসঙ্গে সারা শরীরে, বিশেষত মাংসপেশীতে প্রচ- ব্যথা হয়ে থাকে। পেটেও ব্যথা হতে পারে। জ্বরের ৪-৫ দিন পার হলে শরীরজুড়ে র্যাশ বা ঘামাচির মতো লালচে দানা দেখা দেয়। সঙ্গে বমি ভাব, এমনকি বমিও হতে পারে। এছাড়া ডেঙ্গু গুরুতর হলে রক্তে প্লাটিলেট কমে যায়, চোখের কোণা, দাঁতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেছেন, বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আক্রান্ত হওয়ার পর পরিস্থিতি খারাপ না হওয়া পর্যন্ত মানুষ চিকিৎসকের কাছে যায় না। তার মতে, লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঙ্গে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ খেয়াল রাখতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, এই মশাবাহিত রোগ থেকে আপনি কীভাবে বাঁচবেন? বিশেষজ্ঞরা মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হলে মৃত্যুসহ নানা ধরনের জটিলতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
সতর্কতা :
* ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া এই দুটি রোগের জন্যই দায়ী এডিস মশা সাধারণত সকালের দিকে ও সন্ধ্যার আগে কামড়ায়। ফলে এই দুই সময়ে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
* ঘুমোতে যাওয়ার আগে আলসি না করে মশারিটা অবশ্যই টানিয়ে নিতে হবে। এবং বিছানার চারপাশে মশারি ভালো করে গুজে দিতে হবে। যেন কোনও ফাঁক না থাকে।
* বাড়ির ছাদে বা বারান্দার ফুলের টবে, নির্মাণাধীন ভবনে, বাতিল টায়ার কিংবা প্লাস্টিক কন্টেইনার- কোথাও যাতে তিন থেকে পাঁচদিনের বেশি পানি জমা না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
* মশার কামড় থেকে বাঁচতে নানা ধরনের রিপেলেন্ট অর্থাৎ মশা তাড়ানোর পণ্য যেমন বিভিন্ন ধরনের কয়েল, স্প্রে, ক্রিম জাতীয় পণ্য ব্যবহার করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় এর প্রয়োগ ক্ষতিকর হতে পারে। অতএব ডেঙ্গুর এই ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবকালীন সুরক্ষিত থাকতে নিজে সতর্ক হোন এবং অন্যকে সচেতন করুন। মনে রাখতে হবে, সতর্কতা ও সচেতনতাই মশাবাহিত এ রোগ থেকে মুক্ত থাকার অন্যতম দাওয়াই।