অর্ধশতাধিক মানুষকে বেঁধে গণডাকাতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৪ এএম, ১৬ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের রায়পট্টিতে পাহারাদারসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে বেঁধে গণডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। এ সময় ৫০/৬০ জনের ডাকাত দল ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ দেড় কোটি টাকা এবং বিপুল পরিমাণ সিগারেট লুট করে।
গতকাল শনিবার রাত ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ডাকাতি শেষে বন্দর সংলগ্ন পালরদী নদী দিয়ে দুই ভাগ হয়ে ট্রলারযোগে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। বন্দরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বরত পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা বলেন, রাত ২টার দিকে রায়পট্টিতে ৫০/৬০ জনের সশস্ত্র ডাকাত দল প্রবেশ করে ৬ জন পাহারাদার, বন্দরে চলাচলরত ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক মানুষকে বেঁধে ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙে লুটপাট চালায়।
ডাকাতরা নগদ দেড় কোটি টাকা ও ৩৫ কার্টন সিগারেট লুট করে। ডাকাত দলের সদস্যদের বেশিরভাগই শর্টপ্যান্ট, গেঞ্জি ও মুখোশ পরা ছিল। ডাকাতরা যাওয়ার পথে বিভিন্ন পথচারীকে মারধর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে রাত ৪টার দিকে দুটি ভাগ হয়ে পালরদী নদী দিয়ে ট্রলারযোগে পালিয়ে যায়।
জেরিন এন্টাপ্রাইজের মালিক গাজী জাকির হোসেন জানান, তার দোকানের তালা ও সিন্দুক ভেঙে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। তালুকদার মেডিকেল হল বিকাশ পয়েন্টের মালিক অহিদুল ইসলাম জানান, ডাকাতরা বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে দোকানের ৪টি তালা ভেঙে নগদ পৌনে ৪ লাখ টাকা লুট করেছে।
এ ছাড়া মোল্লা এন্টাপ্রাইজ, পুণ্য রায়ের গদি ঘর, নিত্য রায়, গোলক রায়, পরিমলের মুদি দোকান, বিপুল দাসসহ ১৩টি দোকানে ডাকাতরা আড়াই ঘণ্টা বসে ডাকাতি করে ট্রলার নিয়ে চলে যায়।
একাধিক নৈশ প্রহরী বলেন, ডাকাতরা একাধিক ট্রলার নিয়ে নদীর ঘাটে এসে কমান্ডো স্টাইলে বন্দরে ঢুকে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতি করে। এ সময় প্রায় ৫০ জন দোকানী, পথচারী ও নৈশ কোচের যাত্রীকে বেঁধে রাখে। তাদের টাকা পয়সাও লুট করে।
টরকী বন্দরের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, টরকী বন্দরের ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টরকী পুলিশ ক্যাম্প থেকে ডাকাতিস্থলে পৌঁছাতে ২/৩ মিনিট সময় লাগে। কিন্তু ডাকাতি চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পের ইনচার্জকে মোবাইলে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেননি।
বন্দরের ব্যবসায়ী সহিদুল ইসলাম জানান, টরকী বন্দরে শুক্রবার সাপ্তাহিক হাট ছিল। শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা যার যার প্রতিষ্ঠানেই ছিল।
টরকী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদের সদস্য রাজু আহম্মদ হারুন বলেন, অর্ধশতাধিক মানুষকে বেঁধে ফিল্মি স্টাইলে ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে নগদ টাকা ও সিগারেট লুট করায় ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওই বন্দরের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন হাওলাদার বলেন, স্বাধীনতার পরে এ রকম ঘটনা টরকী বন্দরে আর কখনও ঘটেনি। অথচ এই বন্দরে একটি পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। ঘটনাটি আমাদের বিস্মিত করেছে।
অভিযোগের ব্যাপারে টরকী পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই শাহীন সরদার বলেন, আমাকে কেউই ডাকাতির খবর জানাননি। রাত ৪টার দিকে নৈশ প্রহরী এসে আমাকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে চলে আসি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরনদী সার্কেল) আব্দুর রব হাওলাদার জানান, টরকী বন্দরের রায়পট্টির কয়েকটি দোকানের তালা ভেঙে ডাকাত দল নগদ টাকা লুট করে ট্রলারযোগে পালিয়ে যায়।
আমরা আজ রবিবার সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পুলিশের একাধিক টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। যত দ্রুত সম্ভব এর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।