ফরিদপুরে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে ঝুঁকির মুখে রেলযাত্রা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৮ পিএম, ১৫ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১৯ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ট্রেন চালুর পর ফরিদপুরে আবারো চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারায় এক যুবক রক্তাক্ত আহত হয়েছেন।
গতকাল শনিবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা রেলস্টেশন এলাকায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আবু বকর সিদ্দিকী নামে একজন বলেন, ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি তালমা স্টেশন ত্যাগ করার পরে তার সামনেই এ ঘটনা ঘটে। তিনি হাত দিয়ে বাঁচানোর চেষ্টা করলে হাতের ঘড়ি ভেঙ্গে পাথরটি সজোরে ওই যুবকের কপালে লাগে।
মোহাম্মদ সাব্বির নামে আরেক যুবক বলেন, অল্পের জন্যে ওই যাত্রীর চোখটি রক্ষা পেয়েছে। প্রায় দশ কিলোমিটার পথ রক্ত ঝরতে ঝরতে এসেছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ। পাথর ছুঁড়ে মারা ২৪ বছরের ওই যুবকের নাম পরিচয় পুলিশ লিখে নিয়ে গেছে বলে তিনি জানালেও এর সত্যতা মিলেনি।
নগরকান্দা থানার ওসি মো. সেলিম রেজা বলেন, আমাদের কাছে পাথর ছুঁড়ে মারায় কারো আহত হওয়ার এ ধরনের কোন তথ্য নেই। এমন অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি থানায়।
নগরকান্দা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সূমিনুর রহমান বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল বিধায় এমন ঘটনা তখন শুনিনি। রেল চালুর পর আজ প্রথম শুনলাম। আমরা খুবই গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখবো। আসামীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করবো। স্থানীয়দের নিয়ে ঘটনার তদন্ত ও জড়িতদের চিহ্নিত করতে ব্যবস্থা নেবো। ঝুঁকিপূর্ণ স্পট তালমা স্টেশন: ফরিদপুর হতে রাজবাড়ি পর্যন্ত রেলপথের দুরত্ব ৬৪ কিলোমিটার। এরমধ্যে ফরিদপুর হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেলপথ। যার মধ্যে রয়েছে এই তালমা রেল স্টেশন। এর আগেও সেখানে এভাবে বৈকালিক ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারার ঘটনায় যাত্রী আহত ও রেলের ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার।
ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, এভাবে পাথর ছুড়ে মারার ফলে রেলওয়ে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ট্রেনে যাত্রায় নিরুৎসাহিত হন এবং রেলগাড়ির শত কোটি টাকার সম্পদ বিনষ্ট হয়। তালমা স্টেশনে আশেপাশে এভাবে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় তিব্র উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রেলযাত্রী ও সাধারণ মানুষ। তারা এর প্রতিকারে উপযুক্ত ব্যবস্থা এবং দোষিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। ফরিদপুরে গত বছর হতে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হওয়ার পর প্রায় প্রতিদিনই এভাবে পাথর ছুঁড়ে মারার ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) তরিকুল ইসলাম বলেন, এর আগেও এমন কিছু ঘটনা জানার পর আমরা পুলিশের পক্ষ হতে জড়িতদের গ্রেফতারে জোর অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছিলাম। তখন পাথর ছোঁড়া বন্ধ হয়েছিল। তবে করোনার কারণে অনেকদিন বন্ধ থাকায় এসব দূর্বৃত্তরা আবারও সংগঠিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা পুলিশের মাধ্যমে এসব ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াবো।
ফরিদপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহম্মদ আলী সাকিল বলেন, দুরভিসন্ধিমূলক এভাবে ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে যাত্রীকে আহত করলে ১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ দশ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। আর পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তবে রাতের আঁধারে সংগঠিত এসব অপরাধে জড়িতদের সনাক্ত করা যায়না এবং আহতরা মামলা না করায় জড়িতদের শাস্তি হয়না বলে মনে করা হয়। ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারায় দেশে এ পর্যন্ত তিনজন যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে। আহত হয়েছেন। আর রেলগাড়ির কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে।