রাজধানীর বাস টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের ভিড় : শিমুলিয়ায় ঢল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:২৩ এএম, ১৬ জুলাই,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে গতকাল থেকে আট দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করেছে সরকার। আগামী ২১ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ঈদুল আজহা। আর ২৩ জুলাই থেকে ফের লকডাউন শুরু হবে। রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় লেগেছে। এদিকে কঠোর লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ঢল নেমেছে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল : রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় লেগেছে। কিছুক্ষণ পরপরই টার্মিনাল থেকে যাত্রী নিয়ে বের হচ্ছে আন্তঃজেলার বাস। তবে যাত্রী এবং চালকদের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীন। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে দিনে চার শতাধিক বাস বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, বৃহত্তর ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলায় চলাচল করে। এছাড়া ওই টার্মিনাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ সিলেটে আরও দেড় শতাধিক এনা পরিবহনের বাস যাত্রী পরিবহন করে।
আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রী পরিবহনে তিন শতাধিক দূরপাল্লার বাস সারিবদ্ধভাবে পার্কিং করা রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ শতাংশ ভাড়া বেশি দিয়ে টিকিট কাটছেন যাত্রীরা। প্রতিটি বাসে এক আসন ফাঁকা রেখেই যাত্রীরা বসছেন। এক-দুই মিনিট পরপর টার্মিনাল থেকে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের মুখে মাস্ক দেখা গেলেও আসনে বসে অনেকেই তা খুলে ফেলছেন। চালক এবং তার সহকারীর বেলায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। মিরপুরের বাসিন্দা নাজমুল হাসান। চার ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সকাল নয়টায় মহাখালী বাস টার্মিনালে আসেন। ময়মনসিংহগামী এনা পরিবহনের টিকিট কেটে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তিনি গাড়ি পান। আলাপকালে নাজমুল হাসান জানালেন, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ঢাকার বাসায় ঘরবন্দি রয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজও বন্ধ। এখন লকডাউন শিথিল করায় গ্রামে ঈদ করতে যাচ্ছেন।
এনা পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে তাদের পরিবহনের বাস চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল নয়টা পর্যন্ত তাদের ২৫টি বাস যাত্রী নিয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে। মহাখালী আন্তঃজেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি শওকত আলী বাবুল বলেন, সকাল থেকেই টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। টার্মিনালে পর্যাপ্ত বাস রয়েছে। এখন চালক-যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তদারকি করা হবে।
সায়েদাবাদ : কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রথম দিনেই রাজধানীর সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে দূরপাল্লার বাসের যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। বাসগুলো দ্রুত যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে, আর পূর্ণ হলেই ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, যাত্রী পরিস্থিতিতে তারা খুশি। শিথিলের বাকি দিনগুলোতেও যাত্রী ভালোই থাকবেন বলে মনে করছেন তারা। সায়েদাবাদের জনপথ মোড়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যাত্রী তুলছিল ঢাকা-সিলেট রুটে চলাচল করা হানিফ পরিবহনের একটি বাস। এই বাসের চালক মো. ইদ্রিস বলেন, প্রথম দিন যাত্রীর সংখ্যা খুবই ভালো। অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী ভরে গেছে, আমি এখনই বাস ছেড়ে দেব। অপরদিকে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা মো. রাকিব হোসেন বলেন, যাত্রীর অনেক চাপ। আমাদের চট্টগ্রাম ও সিলেট যাওয়ার গাড়িগুলোর সিট ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে। সিপাহীবাগে একটি হোটেলে চাকরি করেন মো. আবু তাহের। দুই বাচ্চা নিয়ে তিনি যাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বলেন, বাচ্চা দুইটা ঢাকায় বেড়াইতে আইসা লকডাউনে পড়ছে। ওগো বাড়িতে দিয়া আসতেছি। আমি কাইলই আবার চাইলা আসমু। ইমাদ পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছিলেন মো. আব্দুস সালাম।
তিনি বলেন, আমাদের বাসগুলো খুলনা, পিরোজপুর, গোপালগঞ্জ চলাচল করে। আজকে সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত মোট ৩০টি বাস এসব গন্তব্যে যাবে। সবগুলোর বাসেরই টিকিট প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গত ঈদে মানুষ গ্রামে যেতে পারেনি। তাই সুযোগ পেয়ে এবার সবাই যাবে বলে মনে হচ্ছে। সপরিবারে হবিগঞ্জ যাবেন শ্রমিক শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ভিড় আরও বাড়ার আগেই চলে যাচ্ছি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে তারপর হবিগঞ্জ যাব। আল-মোবারকা পরিবহন ভাড়া বেশি চাইতেছে। আগে ভাড়া ৪৭০ টাকা হলেও এখন চাইছে ৫৫০ টাকা। আমরা দুই সিটে দুইজন করেই বসব।
লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনেই শিমুলিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ঢল : কঠোর লকডাউন শিথিলের প্রথম দিনে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ঢল নেমেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোট-বড় যানবাহনে চড়ে যাত্রীরা ঘাটে উপস্থিত হচ্ছেন। এতে বাড়তি যানবাহনের চাপ পড়ায় ফেরিতে যানবাহন পারাপারে বেগ পেতে হচ্ছে। অতিরিক্ত চাপের কারণে ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাক এবং ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনে আসা যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ।
এদিকে গতকাল সকাল থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় ফেরিতে যাত্রীর চাপ ও গাদাগাদি কমে এসেছে। তবে লঞ্চগুলোতে মানা হচ্ছে না নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি। অর্ধেক যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও অধিক যাত্রী নিয়েই সেগুলো চলাচল করছে। অন্যদিকে গণপরিবহন চালু হওয়ায় ঘাটে আসতে সড়ক পথে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমেছে।
ঘাট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে নৌরুটে ১০টি ফেরি ও ৭৮টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে আগেই বাড়ির পানে ছুটছেন তারা। বাগেরহাটগামী যাত্রী ওবায়দুল হাওলাদার জানান, করোনা রোধে লকডাউনের কারণে গত ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। তাই এবার আগেভাগেই চলে যাচ্ছি। বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করব। বরিশালগামী যাত্রী রবিউল বলেন, ঈদের আগের ২-১ দিন ফেরিতে খুব চাপ হয়। তাই এখনই চলে যাচ্ছি। ঈদের পর ফিরে আসব। রবিনা আক্তার নামে একজন নারী বলেন, গতবার ঈদে অনেক মানুষের চাপ ছিল, চাপাচাপিতে মানুষ মারাও গেছে। তাই এবার আগেই সন্তানদের নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। কেরানীগঞ্জ থেকে বরিশাল যাচ্ছি। বাসে আসছি, রাস্তায় তেমন কষ্ট হয়নি। বিআইডাব্লিউটিএর শিমুলিয়া নদী বন্দরের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, নৌরুটে বর্তমানে ৭৮টি লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী ৬০ ভাগ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চালানোর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে প্রচুর যাত্রীর সমাগম ঘটছে। তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চে ওঠার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসি শিমুলিয়াঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ জানান, নৌরুটে বর্তমানে ১০টি ফেরি সচল রয়েছে। ঘাট এলাকায় পারাপারের জন্য যাত্রী ও পণ্যবাহী মিলিয়ে ৫ শতাধিক যানবাহন রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল যানবাহন পারাপার করা হবে। লঞ্চ চালু হওয়ায় ফেরিতে যাত্রী চাপ কমেছে। তবে গণপরিবহন ও প্রচুর ব্যক্তিগত গাড়ি ঘাটে আসায় পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারে বেগ পেতে হচ্ছে। মাওয়া নৌ-পুলিশের ইনচার্জ সিরাজুল কবির জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় প্রচুর যাত্রী ও যানবাহন ঘাটে আসছে। নৌযানগুলোতে নিয়ম অনুযায়ী যাত্রী পারাপারের জন্য নৌ-পুলিশ তদারকি করছে। যেসব লঞ্চে অধিক যাত্রী ধারণ করা হচ্ছে ও নিয়ম অমান্য করছে, তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।