আগৈলঝাড়ায় নির্মাণকালে ধসে পড়া প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি একবছরেও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০৬ পিএম, ১৪ জুলাই,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ১১:০৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে নেওয়া সারা দেশে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এ অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক এই প্রকল্পে সারা দেশে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে গত বছর কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৃহহীন-ভূমিহীন উপকারভোগীদের মাঝে নির্মাণাধীন ঘর বুঝিয়ে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে অসহায়, গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাঠ পর্যায়ে কাজটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বাধীন একটি কমিটিকে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী, উপজেলা সহকারী কমিনার (ভূমি), উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগন।
“জায়গা আছে, ঘর নেই” এমন অসহায় ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব প্রকল্প থেকে মাথা গোজার আশ্রয় হিসেবে সারা দেশে গৃহহীন, অসহায়দের জন্য বসত ঘর নির্মান করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবায়নাধীন ওই প্রকল্পের আওতায় বরিশালের আগৈলঝাড়ায় এক গৃহহীন অসহায়ের বসত ঘর নির্মাণকালে ধসে পড়া ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি প্রায় একবছরেও।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, টিনের ছাউনী দিয়ে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর ও বাথরুমসহ প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। ঠিকাদার ঘরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে ঘরের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে উপজেলা প্রশাসন এমনটি নির্দেশনা থাকলেও দীর্ঘ একবছরেও গৃহহীন অসহায় অনন্ত বাড়ৈকে তার ঘরটি বুঝিয়ে দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানায়, এক বছর আগে আশ্রয়ন প্রকল্পের তৈরি করা ঘর নিম্ন মানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের কারনে তখন নির্মাণের তিন দিনের ব্যবধানে ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে পড়ে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের জোবারপাড় (রামদেবেরপাড়) গ্রামের অসহায় অনন্ত বাড়ৈ গৃহহীন থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প থেকে বাগধা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টির মাধ্যমে একটি ঘর প্রাপ্ত হন। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় অসহায় গৃহহীন ব্যক্তিদের মাঝে তাদের নির্মাণকৃত ঘর হস্তান্তর করা হলেও প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় এখন পর্যন্ত অসহায় অনন্ত বাড়ৈ ঘরে বসবাস করতে পারেনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ মোশররফ হোসাইনের কাজে গাফলতি ও তদারকি না করার কারনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া উপহারের ঘর এক বছরেও নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
অনন্ত বাড়ৈ অভিযোগ করেন, ঘরের নির্মাণ করা দেয়াল ভেঙ্গে পড়ার পর ঠিকাদার দেয়াল নির্মাণে অনীহা প্রকাশ করে। তখন আমাদের বাড়ির লোকজন আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করে। আমি ঠিকাদারকে ইট, বালু, সিমেন্ট ও ঘরের জন্য কাঠ কিনে দেই। আমার মতো অসহায় ব্যক্তির তখন ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করতে মানুষের কাছে হাত পেতে সহযোগিতা নিতে হয়েছে। কিন্তু দুঃখ একটাই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর তৈরিতে অনিয়মের কারনে প্রায় একবছরেও ঘরে উঠতে পারিনি। ঠিকাদার এখন পর্যন্ত ঘরের ফ্লোর প্লাস্টার, বারান্দা ও বাথরুমের কাজ সমাপ্ত করেনি।
সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরের বাকি কাজ স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রদীপ রায়কে বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোশারফ হোসাইনের কাছে অসহায় অনন্ত বাড়ৈর ঘরটি প্রায় একবছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অনন্ত বাড়ৈ তার ঘরের ফ্লোর রড দিয়ে নিজ খরচে ঢালাই দেয়ার কথা বললে আমরা ওই ঘরের কাজ সমাপ্ত করতে পারিনি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম বলেন, “জায়গা আছে, ঘর নেই” এমন অসহায় ও দুস্থদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া অনন্ত বাড়ৈকে যে ঘর দেয়া হয়েছে সেই ঘরটি তৈরির কাজ অসমাপ্ত রয়েছে বিষয়টি আমি জানতে পেরে তার বাড়িতে সরেজমিন গিয়ে ঘরের বাকি অসমাপ্ত কাজ গুলো সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিয়েছি।