পিরোজপুরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে মারা গেলেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৯ পিএম, ১৪ জুলাই,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০৭ পিএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
পিরোজপুরে অসুস্থ অবস্থায় সরকারি সেবা অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করলেন মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। সোমবার গভীর রাতে পিরোজপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের সেবা নম্বরে বারবার ফোন দেওয়ার পরেও ফোন না ধরায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাননি বলে জানিয়েছেন মৃত ব্যক্তি মেয়েজামাই কামরুজ্জামান পলাশ।
মৃত পারভীন রহমান (৫৫) জেলার মঠবাড়িয়ার দেবীপুর গ্রামের সাফা বন্দর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) দুপুরে নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
মৃতের এক আত্মীয় মো. আব্দুল আজিজ খান বলেন, রাত ২টার দিকে পিরোজপুর সদরের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের নম্বরে বারবার ফোন দিলে চালক মোতালেব প্রতিবারই ফোন না ধরে কেটে দেন। পরে আমরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় একটি তক্তার ওপর তাকে শুইয়ে হেঁটে হেঁটেই হাসপাতালে নিয়ে যাই।
পরে হাসপাতালে পৌঁছালে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইন্দুরকানী থেকে অন্য একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে বাড়িতে নিয়ে আসি। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জরুরি সময়ে যদি সরকারি সেবা না পাওয়া যায়, সেই সেবা চালু রেখে কী লাভ?
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন প্রাণফোঁটার পরিচালক ম. শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন, মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন সরকারি অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ায় আমাদের সংগঠনের (প্রাণফোঁটার) নম্বরে ফোন দেন। আমরা পরবর্তীতে স্বজনদের সহযোগিতায় তাকে হাতে তক্তার ওপর করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করলে তাকে ইন্দুরকানী থেকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি।
হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার ডা. আরিফ হাসান জানান, রোগী হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন। রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে তিনি ধারণা করে জানান, তিনি হয়তো করোনা না হয় স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে মারা যেতে পারেন। তবে তিনি অ্যাম্বুলেন্স না পাওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
সরকারি অ্যাম্বুলেন্সচালক মোতালেব হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার কাছে এ রকম কোনো ফোন আসেনি। আপনি প্রয়োজনে আমার মোবাইল চেক করে দেখতে পারেন। আমি এর আগের দিন রাতে ডা. বিডি হালদারের মা করোনা পজিটিভ হওয়ায় তাকে নিয়ে খুলনায় গিয়েছিলাম। সেদিন রাতে এমন একটা ফোন এসেছিল। আমি বলেছিলাম আমি রোগী নিয়ে খুলনায় আছি। আপনারা অন্যভাবে ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি জানান, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে দুজন অ্যাম্বুলেন্সচালক। দুজনই হত্যা মামলার আসামি। একজন কবির হোসেন পলাতক রয়েছেন। আরেকজন মোতালেব জামিনে রয়েছেন। গতকাল মোতালেব করোনার রোগী নিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। তাই তিনি হয়তো ফোন রিসিভ করেননি।
আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক দেওয়ার কথা বলেছেন। নতুন চালক পেলে এ সংকট অনেকাংশে কমে যাবে।