রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডিঃ সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার ৪ ছেলেসহ ৮জন ৪ দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১৩ পিএম, ১০ জুলাই,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:১৩ এএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড লিমিটেডের জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও তার ৪ ছেলেসহ ৮জনের রিমান্ড ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ শনিবার বিকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ১০দিনের রিমান্ড আবেদন করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট ফাহমিদা খানমের আদালতে হাজির করা হয়। আদালত শুনানী শেষে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরআগে কড়া পুলিশ পহোরায় তাদের আদালতে আনা হয়। এবং আদালত প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, রূপগঞ্জ থানায় দায়ের করা মামলায় আসামীদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। শুনানী শেষে আদালত ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে অগ্নিকা-ের ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করা হয়। (মামলা নং-১৯)।
মামলার বাদী রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম। তার চার ছেলে হাসিব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজীম ইব্রাহীম। অন্য তিনজন হলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহান শাহ আজাদ, হাসেম ফুড লিমিটেডের ডিজিএম মামুনুর রশিদ ও এডমিন প্রধান সালাউদ্দিন।
এদিকে শনিবার দুপুরে কারখানাটি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সারাদেশ এ ঘটনায় স্তব্ধ। একসঙ্গে এতজনের প্রাণহানি খুবই দুঃখজনক। প্রথমে তিনজন পরবর্তীতে ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়। ফায়ার সার্ভিস কিছু জীবিতদেরকেও উদ্ধার করেছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কারখানায় কতজন লোক কাজ করত, সবই তদন্তে বেরিয়ে আসবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি সহযোগিতা করা হয়েছে। আরও সহযোগিতা প্রয়োজন হলে সরকারের পক্ষ থেকে করা হবে। মামলা ও দোষীদের শাস্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই মামলা হবে, এর সঙ্গে সামান্যতম দোষীদেরকেও আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। তবে তদন্তের আগে বিস্তারিত কিছু বলতে চাচ্ছি না। তদন্ত শেষে অবশ্যই তদের বিচার হবে। কারখানায় শিশুশ্রমের বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, কতজন শিশুশ্রমিক ছিল তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অগ্নিকান্ডের সময় কারখানা ভবনের ছাদ আটকানো ছিল এবং সিঁড়িতে তালা দেয়া ছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৭ জনকে ছাদ থেকে বড় একটি মই দিয়ে রেস্কিউ করেছে ফায়ার সার্ভিস। সিঁড়িতে ও ছাদে তালা দেয়া ছিল কি-না তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
পরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, ৩০২ ধারায় পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। সজীব গ্রুপেরর চেয়ারম্যান আবুল হাশেম, তার ছেলে সজীবসহ আটজন গ্রেফতার হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে কোম্পানির সিও, পরিচালক, ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইনচার্জও রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ৬ তলা ভবনটিতে তখন প্রায় ৪০০’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কীকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে। কারখানার সিঁড়ির দরজা তালাবদ্ধ থাকায় মৃতের সংখ্যা এত বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে এক সঙ্গে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ২৯ ঘণ্টা পর শুক্রবার গভীর রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। এর আগে, প্রাণ বাঁচাতে লাফিয়ে পড়ে ও আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সবমিলিয়ে শনিবার বিকাল পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়। কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।