বাগেরহাটে সাত বছর ঝুলে আছে নিয়োগ কার্যক্রম, ৩৩০ স্বাস্থ্যসহকারী পদের ১৬৭ টি শূন্য
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৪ পিএম, ৩০ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৩৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বাগেরহাটে সাত বছর ধরে ঝুলে আছে স্বাস্থ্য সহকারি নিয়োগ কার্যক্রম। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আট বছরেও সম্পন্ন হয়নি নিয়োগ কার্যক্রম। অর্ধেকের কম জনবল দিয়ে চলছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম। যার ফলে কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে দীর্ঘ দিনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকুরী প্রত্যাশীরা। কি কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য নেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একাধিকবার উর্দ্ধোতন কর্তৃকর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোন ফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির।
বাগেরহাট সিভিল সার্জন সূত্রে জানাযায়, বাগেরহাট জেলায় ৩‘শ ৩১টি স্বাস্থ্য সহকারি পদ রয়েছে। এসব পদের অনুকূলে একশ ৬৫ জন কর্মরত রয়েছে। এই হিসেবে অর্ধেকের বেশি অর্থ্যাৎ একশ ৬৭ টি স্বাস্থ্য সহকারি পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৩৪টি, মোল্লাহাটে ১৫, ফকিরহাটে ১৬, চিতলমারী ১০, কচুয়ায় ১১, মোরেলগঞ্জে ৩৬, রামপালে ২২, মোংলায় ৯ এবং শরণখোলা ১৪টি করে শূন্য পদ রয়েছে। এসব শূন্য পদ পূরণের লক্ষে ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বাগেরহাটে ১০৯টি স্বাস্থ্যসহকারি পদে নিয়োগের কথা বলা হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে নিয়োগ সম্পূর্ণ করার নির্দেষ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ কার্যক্রম শেষ না হতেই ২০১৮ সালে আরও ৪০টি শূন্য পদের অনুকূলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু দুটি নিয়োগ কার্যক্রমই অসম্পূর্ণ রয়েছে। যার ফলে জেলার মানুষ যেমন স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিয়োগ প্রত্যাশীরাও হতাশায় ভুগছেন।অতিরিক্ত কাজ করতে হচ্ছে চাকুরীরত স্বাস্থ্য সহকারীদের।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, স্বাস্থ্য সহকারিরা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। এরা ইপিআই (টিকাদান) কার্যক্রম পরিচালনা, স্থানীয় মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়াসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন সাধারণ মানুষকে। আমাদের এই উপজেলায় ৬৪টি স্বাস্থ্য সহকারী পদের অনুকূলে মাত্র ২৮ জন কর্মরত আছেন। যার ফলে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা খুবই বিড়াম্বনার শিকার হই। স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে কোনমতে কাজ চালিয়ে নিতে হয়। দ্রুত নিয়োগ বাস্তবায়ন হলে স্বাস্থ্য সেবার আরও উন্নতি করা সম্ভব।
চাকুরী প্রত্যাশী সিদ্ধার্থ শংকর পাইক ও বেলাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য সহকারি পদে আবেদন করেছিলাম। জেলায় অনেকগুলো পদ দেখে আশা নিয়ে আবেদন করেছিলাম। পড়াশুনাও করেছিলাম। লিখিত পরীক্ষাও দিয়েছি। কিন্তু আজও নিয়োগের কোন খবর পেলাম না। এদিকে চাকুরীর আশায় আশায় বয়সও প্রায় শেষ। নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়ে গেলে, চাকুরী না হলেও কোন আপসোস থাকতো না। কারণ এই চাকুরীর আশায় অন্য কোন কাজেও প্রবেশ করিনি। আমরা চাই অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হোক। শুধু সিদ্ধার্থ, আর বেলাল নয় এমন দাবি করেছেন স্বাস্থ্য সহকারি পদে আবেদন করা অনেক চাকুরী প্রত্যাশী।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, স্বাস্থ্য সহকারিদের পদ শূন্য থাকার কারণে আমাদের ইপিআই ও স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। এই শূন্যপদ গুলো পূরণের জন্য উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানিয়েছি। আশা করি এবার হয়ত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, দুটো বিজ্ঞপ্তিতে আমরা ১৪৯ জন স্বাস্থ্য সহকারি নিয়োগ দিতে পারব। এরা কাজে যোগ দিলে মাঠ পর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম আরও তরান্বিত হবে।