নতুন ‘কঠোর বিধিনিষেধে’ যা থাকছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৫ এএম, ২৬ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:০৭ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। করোনার নতুন ধরন বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় সীমান্ত জেলাগুলোর পাশাপাশি সারাদেশেই এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এ দিকে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পর ডেল্টা প্লাস ছড়িয়ে পড়ার তথ্য মিলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে ‘শাটডাউন’ ঘোষণার কথা ভাবা হচ্ছে। এরই মধ্যে করোনা বা কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি ১৪ দিনের জন্য দেশকে ‘শাটডাউন’ ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় কমিটির এই পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলে যেকোনো সময় সরকার দেশকে শাটডাউন ঘোষণা করবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। তবে লকডাউনের পর যে শাটডাউনের কথা বলা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে এর রূপ বা ধরন কেমন হতে পারে? কী ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর হবে শাটডাউনের সময়? এ বিষয়ে জাতীয় কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, সুপারিশে বলা হয়, শাটডাউন চলা অবস্থায় জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখা প্রয়োজন। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে যত প্রস্তুতিই থাকুক না কেন, সংক্রমণ বাড়তে থাকলে স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হয়ে পড়বে। এদিকে আজ শুক্রবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গণমাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে ‘ঈদের সময় কঠোর হবে’ সরকার। যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুতই ‘কঠোর বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন আসছে’ বলেও জানিয়েছেন তিনি। কবে এই কঠোর বিধিনিষেধ বা শাটডাউন ঘোষণা আসতে পারে এ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন হয়ে এলেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।’ এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির করা সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, সারাদেশে শাটডাউনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো সময় সরকার তা ঘোষণা দেবে। আগের চেয়ে বিধিনিষেধ আরো কঠোর হবে। করোনা পরিস্থিতি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। অপর দিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ কথা জানানো হয়। আগের দিন বুধবার রাতে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় এ সুপারিশ করা হয়। সভায় দেশে কোভিড-১৯ এর সাম্প্রতিক ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও আলোচনা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ঢিলেঢালা লকডাউন হলেও সংক্রমণ আরো বেড়ে যাওয়ায় ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন‘ ঘোষণা করে সরকার। পরে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয়। তবে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল রোজার ঈদ পর্যন্ত বন্ধ ছিল। পরে ২৪ মে থেকে অর্ধেক সিট খালি রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয়া হয়।
একইসাথে হোটেল- রেস্তোরাঁগুলো আসন সংখ্যার অর্ধেক বসিয়ে খোলা রাখার অনুমতি দেয় সরকার। তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় সারাদেশে বিধিনিষেধ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৬ জুন বিধিনিষেধ এক মাস বাড়িয়েছে সরকার, যা ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে। এদিকে গত বছর মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে আলোচনা হলেও তা এখনো বন্ধ রয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসিসহ পাবলিক পরীক্ষাগুলো নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের এইচএসসিতে অটোপাস দেয়া হয়েছিল। এবারও অটোপাসের বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো জানা যায়নি।