না’গঞ্জে গ্রেফতারকৃত দম্পতি নদীকে ভারতে পাচার করে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৫ পিএম, ২২ জুন,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১২:২৮ এএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের সূত্র ধরে নাম আসে নদী আক্তার নামের এক নারীর। পুলিশের খাতায় পলাতক এই নদীকে অবৈধপথে ভারতে নিয়ে যান পাচারকারী চক্রের সদস্য নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া ও আশিক ওরুফে রুবেল ওরফে রাহুল। পুলিশের তথ্যানুসন্ধানে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এদিকে মানব পাচারের অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড়স্থ সেন্টমার্টিন পরিবহনের কাউন্টারের সামনে থেকে গত ৪ জুন রাতে এই দম্পতিকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১ সদস্যরা।
পুলিশের দাবি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি অনেক তরুণীকে ভারত, দুবাই, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া চক্রে বড় ভূমিকা রাখছেন এই নদী। ভারতে নিপীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা অন্তত পাঁচ তরুণী ঢাকার হাতিরঝিল থানায় যে মামলা করেছেন, সেখানেও আসামির তালিকায় নদীর নাম রয়েছে। সর্বশেষ ১৯ জুন শনিবার ভারতফেরত তিন তরুণী মামলা করেন, যাতে নদীকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।
জানা গেছে, নদী মালয়, হিন্দি, আরবিসহ চারটি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তরুণীদের পটিয়ে পাচারকারী চক্রের ফাঁদে ফেলতে তার জুড়ি নেই। নারী পাচার সিন্ডিকেটের টপ ওয়ান্টেড এই সদস্যকে এখন খুঁজছেন গোয়েন্দারা। নদী একসময় রাজধানীর ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করতেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের বাগবাড়ী। ঢাকার আন্ডারওয়াল্ডের পরিচিত মুখ শরীয়তপুরের বাসিন্দা সন্ত্রাসী মো. রাজীবকে বিয়ে করেছিলেন নদী। ২০১৫ সালে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজীব মারা যান। এরপর ২০১৯ সালে সাইফুল ইসলাম নামের আরেকজনকে বিয়ে করেন নদী। ওই বছরই দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়।
পুলিশ জনিয়েছে, একসময় নদীর সঙ্গে পরিচয় হয় বানু ও তার স্বামী রাসেলের। ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৭ সালে বানু ও রাসেল নদীকে প্রথমে মালয়েশিয়া পাঠান। রাসেলও এ সময় নদীর সঙ্গে মালয়েশিয়া যান। এরপর সেখানে নদীকে নিয়ে একটি বাসায় ওঠেন রাসেল। ওই বাসায় আরও চার-পাঁচ মেয়েকে দেখেন তিনি। কয়েক দিন পর নদী জানতে পারেন, যৌনকর্মে জড়ানোর জন্য তাদের বাংলাদেশ থেকে আনা হয়েছে। প্রথমে নদী এই কাজে সম্পৃক্ত হতে অস্বীকার করলে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। ভয়ভীতি দেখিয়ে এই পথে তাকে নামতে বাধ্য করে ওই চক্র। এরপর প্রতিদিন সকালে নদীকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে রেখে আসত রাসেল ও তার চক্রের সদস্যরা। মালয়েশিয়া থাকাকালে নদীর সঙ্গে চাঁদপুরের বাসিন্দা সাইফুলের পরিচয় হয়। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে সাইফুলকে বিয়ে করেন নদী। তখন তারা শনির আখড়ায় থাকতেন। তবে বিয়ের কিছুদিন পর সাইফুলের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় তার। এদিকে, শনির আখড়ায় থাকার সময় নদীর সঙ্গে পরিচয় হয় নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া নামের এক তনুণীর। গত বছর নদীকে অবৈধপথে ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেন সোনিয়া। এরপর সোনিয়া ও তার স্বামী আশিকের মাধ্যমে নদী গত বছর বেনাপোল হয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতে যাওয়ার পর পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাকে আধার কার্ড দেন। ওই কার্ড ব্যবহার করেই বেঙ্গালুর পর্যন্ত পৌঁছান তিনি। এরপর নিয়মিত পাচারকারী চক্রের সদস্য হয়ে বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের নিয়ে যেতেন নদী। প্রতিজন মেয়ের জন্য নদীকে দেওয়া হতো ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি হাফিজ আল ফারুক জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারত, দুবাইসহ আরও কয়েকটি দেশে যারা নারী পাচারের একটি জালে একত্র- তাদের মধ্যে নদী অন্যতম। পাচারকারীরা নদীকে অন্য তরুণীদের টোপ দিতে ব্যবহার করে।